শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ধরন পাল্টে আরও ভয়াবহ নির্যাতন

আজ জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

জিন্নাতুন নূর

নারী সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন বলছে, দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী নির্যাতনের ধরনেও এসেছে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। দিনকে দিন নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কয়েকবছর আগে বখাটেদের উচ্ছৃঙ্খলতা বিভিন্ন বয়সী নারী ও কিশোরীদের ইভ টিজিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অথচ এখন বাধা পেলেই বখাটেরা ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করছে। এমনকি গণধর্ষণ শেষে সেই নারী বা কিশোরীকে হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হরহামেশা ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ পর্যন্ত নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলেই নিক্ষেপ করা হচ্ছে অ্যাসিড।

কয়েকদিন আগেই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেণুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে তার পরীক্ষার কেন্দ্রেই পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়ার তরগাঁও এলাকায়  এইচএসসি পরীক্ষার্থানীর ওপর সেই এলাকার বখাটেরা অ্যাসিড ছোড়ে। গত ১৬ আগস্ট যৌতুকের বলি হয় পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাকালিয়া গ্রামের গৃহবধূ আল্লাদী খাতুন।

একশন এইড বাংলাদেশ-এর এক গবেষণায় জানা যায়, দেশের তিনজনের মধ্যে দুজন নারী অর্থাৎ দেশের মোট নারীর ৬৬ শতাংশই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। এর মধ্যে ৭২.৭ শতাংশই তাদের এই অভিজ্ঞতা কারও কাছে তুলে ধরেন না।  অধিকাংশ নারীই দিনকে দিন গালাগাল, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেয়েরা ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্নভাবে নারীদের নির্যাতনের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের আশায় গ্রাম থেকে আসা শহরের মেয়েরা শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়গুলোর নজরদারি না থাকায় এবং নির্যাতনের কারণে দেশের প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ না থাকায় বিভিন্ন বয়সী নারীরা নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ধর্ষণ : নারীর ওপর যেসব নির্যাতন হচ্ছে, তার মধ্যে ধর্ষণ নিয়ে উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি। ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মোট ৭৯১ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪৬ জনকে। আর ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করে আরও সাতজন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যে শুধুমাত্র গত জুলাই মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয় ১৩৭ জন নারী।  আর ধর্ষণের পর ১০ জনকে হত্যা করা হয়। যৌতুক : মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয় ১৪২ জন। এর মধ্যে ৭১ জন নারীকে হত্যা করা হয় আর ৬৯ জনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ছাড়া যৌতুকের কারণে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন আরও ২ জন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, যৌতুকের কারণে সর্বশেষ গত জুলাই মাসে হত্যা করা হয় তিনজন নারীকে আর এ কারণে নির্যাতনের শিকার হন আরও সাতজন নারী। অ্যাসিড সন্ত্রাস : দেশে অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা হলেও এখনো অ্যাসিড সন্ত্রাস থামানো যাচ্ছে না। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের তথ্যে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ৮টি ঘটনায় নয়জন অ্যাসিডে ঝলসে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ১৮টি ঘটনায় ২২ জন অ্যাসিডে ঝলসে যান। এর আগের বছর ২০১৭ সালে ৩৮টি ঘটনায় ৪৭ জন অ্যাসিডে ঝলসে যান।  যৌন হয়রানি : নারী নির্যাতনের আরেকটি অস্ত্র হচ্ছে যৌন হয়রানি। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে নারীরা নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর তথ্যে, ২০১৮ সালে দেশে যৌন হয়রানির শিকার হয় মোট ১৫৭ জন নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির জন্য মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে নয়জন, এ কারণে দুজনকে হত্যা করা হয়। আর যৌন হয়রানির কারণে আহত হয় ৩৩ জন। এর বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত অশ্লীল প্রস্তাব দিচ্ছেন, অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে অনেকের। কারও কারও ছবি বিকৃতভাবে এডিট করে তা আপলোড করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর