বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চোখ ১৫ হাজার কোটি ডলারে

হিস্যা বাড়াতে ১৪ সদস্যের কমিটি বাংলাদেশের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আবার এ খাতের ৯০ শতাংশ আয় হয় সস্তা মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে। এই সস্তা পোশাক দিয়েই বিশ্ববাজারে গার্মেন্ট রপ্তানিতে চীনের পর এখন দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। তবে এখানেই থেমে থাকতে চায় না সরকার। তাই সস্তা থেকে উচ্চমূল্যের বিলাসী পোশাক রপ্তানির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির মাত্র ১০ শতাংশের মতো ফ্যাশনেবল বা দামি পণ্য, যার আকার ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। অথচ এই পণ্যের বিশ্ববাজার ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি। সরকার এখন এই উচ্চমূল্যের বিলাসী পোশাক রপ্তানি বাড়াতে গার্মেন্ট মালিকদের উৎসাহ দিচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আমরা যদি শৌখিন পোশাক বাজারের ১০ শতাংশ হিস্যাও ধরতে পারি, তার পরও এ বাজার থেকে বছরে অতিরিক্ত আরও প্রায় ১৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব।’

সূত্রগুলো জানায়, উচ্চমূল্যের এই তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়াতে বাণিজ্য সচিবকে সভাপতি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সহসভাপতি করে ১৪ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার ওই কমিটির বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে বস্ত্র সেল।

এ কমিটি পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে বিভিন্ন ফোরামের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ, নতুন বাজারে প্রবেশ কৌশল, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব দেবে।

বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে। আমাদের  লক্ষ্য এই সময়ের মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। এজন্য নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’ সচিব বলেন, ‘ফ্যাশনেবল পোশাকের বাজার ধরার ক্ষেত্রে আমাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করে দেশের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা যদি এই উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে পারেন তবে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় কয়েক বছরেই দ্বিগুণ করা সম্ভব।’ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পোশাক খাতে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ওভেন গার্মেন্ট থেকে আয় হয়েছে ১৭ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার; যা বিগত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি এবং নিট গার্মেন্ট থেকে আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার; যা বিগত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের থেকে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। এ আয়ের বেশির ভাগই আসে সাধারণ পোশাক বিক্রি করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ইউনিটপ্রতি পোশাকের যে দাম পায় তা ৩ থেকে ৪ ডলারের বেশি নয়। একটি সাধারণ পোলো শার্ট রপ্তানি করলে ৩ ডলার দাম পাওয়া যায়। সেখানে সুতা, কাপড়ের মান ভিন্ন হলে কিংবা বাড়তি এমব্রয়ডারি, প্রিন্টিং ওয়াশ যুক্ত করে দামি পণ্য করা হলে মূল্য হতো কমপক্ষে ৮ ডলার। দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে পোশাক খাত থেকে যে রপ্তানি আয় আসে সেখানে কিছুটা ভ্যালু অ্যাড করলেই দ্বিগুণ আয় সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাক উৎপাদনকারীরা প্রচলিত পোশাকের বাইরে দামি ও ফ্যাশনেবল পণ্য রপ্তানির চেষ্টা করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের কারখানাগুলোয় তৈরি পোশাকের শুধু শেষ স্তরটি অর্থাৎ সেলাইয়ের কাজটি সম্পন্ন হয়। এর কাপড়, ডিজাইন সবই ইউরোপের দেশগুলো থেকে আনা হয়। ক্রেতারা ছবি আর একটি নমুনা পাঠান। সেই আদলে পোশাক তৈরি করা হয় কারখানায়। দামি পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে এর বাইরে আরও কিছু বাড়তি মূল্য সংযোজনের প্রয়োজন হয়। সেজন্য দেশের কারখানাগুলোকে উন্নয়নের পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে যদি উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা বাড়ানো যায়, তবে এ খাত থেকেই রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর