মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শেয়ারবাজারে চার বছরের ভয়াবহ পতন

বিশ্লেষকরা বলছেন, আস্থার সংকট ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যত অচলাবস্থার জন্য এই পরিণতি

আলী রিয়াজ

শেয়ারবাজারে চার বছরের ভয়াবহ পতন

সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর ফের ভয়াবহ পরিণতি শেয়ারবাজারে। সূচক ও লেনদেনে ধস নেমেছে। কমছে সব ধরনের শেয়ারের দর। গতকাল সপ্তাহের দ্বিতীয়দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৮৯ পয়েন্ট। সূচক নেমে এসেছে ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে। যা গত ৪ বছর ৮ মাস বা ৫৬ মাসের মধ্যে  সর্বনিম্ন। ভয়াবহ পরিণতির প্রভাবে কমছে ব্লু চিপস বলে পরিচিত মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার দরও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরম আস্থার সংকট ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যত অচলাবস্থার জন্য শেয়ারবাজারের এই পরিণতি। সম্প্রতি ডিএসইর এমডি নিয়োগ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এই সংকট আরও বেড়েছে। ফলে আস্থাহীনতা চরম আকার ধারণ করেছে। এতে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রতিদিন কমছে ডিএসইর সূচক।

জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে। যা ৪ বছর ৮ মাস অর্থাৎ ৫৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫ সালের ৭ মে একই অবস্থানে ছিল ডিএসইএক্স সূচকটি। ওই দিন এটি ৪ হাজার ১২২ পয়েন্টে অবস্থান করে। শেয়ারবাজারের এই দরপতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা গ্রামীণফোনের। কোম্পানিটির দরপতনে সূচক কমেছে ২৫ পয়েন্ট। এর পরের অবস্থানে থাকা বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর কারণে ৮ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মার কারণে ৫ পয়েন্ট, আইসিবির কারণে ৩ পয়েন্ট ও বার্জার  পেইন্টস বাংলাদেশের কারণে ৩ পয়েন্ট সূচক কমেছে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণেও লেনদেন কমেছে। লেনদেন হার নেমেছে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। গতকাল লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেনের শীর্ষে ছিল লাফার্জ হোলসিম, এডিএন টেলিকম, রিং সাইন  টেক্সটাইল, খুলনা পাওয়ার, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়েস্টার্ন মেরিন, নর্দার্ণ জুট, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, গ্রামীণফোন ও এসএস স্টিল। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৮টির, কমেছে ২০৬টি এবং অপরিবর্তিত থাকে ১৮টির দর। সিএসইতে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট  লেনদেন হয়েছে। বাজারের এই ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে সবাই। ডিএসইতে সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া নাম সর্বস্ব কোম্পানির আইপিও নিয়ে বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি হতাশ। এসব কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমেছে। জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে শেয়ারবাজার থেকে। তারা এখন শেয়ার ধরে রাখতে চাইছে না। প্রতিদিন বিক্রি করছেন। মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর দর এ কারণে কমছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার কেনা শুরু করলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বেশি। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এছাড়া তারল্য সংকটও একটি বড় কারণ। নগদ অর্থের সরবরাহ করা ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক পরিচালক ও মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূরই নাহরিন বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ব্যাংকারসহ পেশাজীবীরা। যারা তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তারা আমানত হিসেবে বিনিয়োগ করে প্রতিদিন লোকসানের শিকার হচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। বাজারে তাদের জন্য কেউ কিছু করছে না। করারও কেউ নেই। সুশাসনের অবনতি ঘটেছে বাজারে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইপিও এসেছে যার বেশিরভাগই ছিল নামসর্বস্ব। বাজারে গত ২/৩ বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া একটি কোম্পানির ১০ টাকার শেয়ার দর নেমেছে ৮ টাকায়। বন্ধ, নামসর্বস্ব কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়েছে।  প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ১৫ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে নিয়ে গেছেন। কোনো কোম্পানির পরিচালকদের শাস্তি হতে কেউ দেখেনি। তারল্য চলে যাওয়ায় বাজার এখন খুবই দুর্বল অবস্থানে চলে গেছে। এখন নতুন করে অর্থ আনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যারা অনিয়ম করে আইপিও নিয়ে এসেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর