বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ভোট নিয়ে তিন দল

২৫ বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হলেন হাবিবুর রহমান রাব্বী। ওই ওয়ার্ডে আরেক প্রভাবশালী নেতা কাফরুল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইকরাম বাবু। বিএনপির হাইকমান্ড থেকে বাবুকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো তাকে পুরোপুরি রাজি করানো যায়নি। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান জানালেন, বাবু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হয়েছেন। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম জুয়েল। বিএনপির পক্ষ থেকে তাকেও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শুধু এই দুটি ওয়ার্ডই নয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ২৫টি ওয়ার্ডেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এ নিয়ে বেকায়দায় বিএনপির হাইকমান্ড। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে দল মনোনীত মেয়র ভোটেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। সবাইকে হয়তো বসানো যাবে না। অধিকাংশই প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত বসানো হবে। পরবর্তীতে ওইসব প্রার্থীর বিষয়টি বিবেচনায় নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেহেতু দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে না তাই প্রতি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্র্থী থাকলেও সমস্যা হবে না। প্রত্যেক প্রার্থীরই জনমত যাচাই হবে এই ভোটে। এতে পরবর্তীতে কমিটিসহ সবক্ষেত্রেই বিএনপির কাজ করা সহজ হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও উত্তর সিটির সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাছাই কমিটির সমন্বয়কারী মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়সীমা পার হওয়ার পর এখনো কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়ে গেছেন। দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তাদের নির্বাচনে নিবৃত্ত করার  চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ডেই আমাদের একজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী থাকবে।’

দক্ষিণে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা : ডিএসসিসির ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার  হোসেন লিপু। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দল সমর্থিত প্রার্থী আব্বাস উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন নজরুল ইসলাম জুয়েল। একইভাবে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দল সমর্থিত শফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আবু নাছের লিটন, ৩৭ নম্বরে দল সমর্থিত ফরহাদ রানার বিরুদ্ধে সুমন ভূঁইয়া, ৩৯ নম্বরে দল সমর্থিত সাব্বির আহমেদ আরেফের বিরুদ্ধে মোজাম্মেল হক মুক্তা, ৪৬ নম্বরে দল সমর্থিত  মো. ফারুকের বিরুদ্ধে মো. সোহেল ও ঢালী মামুনুর রশীদ, ৫০ নম্বরে দল সমর্থিত ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনোয়ার হোসেন স্বাধীন, ৫১ নম্বরে দল সমর্থিত আলিম আল বারী জুয়েলের বিরুদ্ধে কবির আহম্মেদ, ৫২ নম্বরে দল সমর্থিত রবিউল ইসলাম দীপুর বিরুদ্ধে বাদল রানা, ৫৫ নম্বরে দল সমর্থিত মো. সামিরের বিরুদ্ধে শহিদুল হক, ৫৯ নম্বরে দল সমর্থিত আসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে  খোরশেদ আলম খোকন, ৬১ নম্বরে দল সমর্থিত জুম্মন মিয়ার বিরুদ্ধে শাহ আলম এবং ৬৬ নম্বরে দল সমর্থিত আকবর হোসেন নান্টুর বিরুদ্ধে সাবেক কাউন্সিলর নুরুদ্দিন মিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

উত্তরে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাজী আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জামাল হাসান বাপ্পী। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন দলের সমর্থন পেলেও বুলবুল মল্লিক  ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহাফুজ হোসেন খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন হাবিবুর রহমান ও  মোহাম্মদ রিপন। একইভাবে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দল সমর্থিত প্রার্থী  দেলোয়ার হোসেন দুলুর বিরুদ্ধে গোলাম রাব্বানী, ১৬ নম্বরে দল সমর্থিত হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সেলিম আহমেদ রাজু, ২৩ নম্বরে দল সমর্থিত হেলাল কবিরের বিরুদ্ধে কামাল আহমেদ দুলু, ২৫ নম্বরে দল সমর্থিত সাইফুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে এস এম হাসেম, ৩০ নম্বরে দল সমর্থিত হাজী নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধে আবুল হাসেম, ৩১ নম্বরে দল সমর্থিত সাজেদুল হক খান রনির বিরুদ্ধে হাসিনা মোর্শেদ কাকলী ও ফরিদউদ্দিন ফরহাদ, ৩৮ নম্বরে দল সমর্থিত জাহাঙ্গীর মোল্লার বিরুদ্ধে আলী হোসেন, ৪০ নম্বরে দল সমর্থিত মোতালেব হোসেন রতনের বিরুদ্ধে আতাউর রহমান, ৪৩ নম্বরে দল সমর্থিত তহিরুল ইসলাম তুহিনের বিরুদ্ধে রেজাউল করিম এবং ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে দল সমর্থিত মোতালেব হোসেন রতনের বিরুদ্ধে হেলাল তালুকদার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু জানান, তার ওয়ার্ডে বিএনপির একজন নেতা প্রার্থী হিসেবে রয়ে  গেলেও তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। ওই প্রার্থী কোনো প্রচার চালাবেন না। ফলে তার কোনো সমস্যাও হবে না।

উন্মুক্ত ওয়ার্ড একটি : ডিএনসিসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থিতা বিএনপির সব প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মাসুদ খান রাজেশ ও ওসমান গণি শাহজাহান। এ প্রসঙ্গে মাসুদ খান রাজেশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের সব নেতা-কর্মীই তার সঙ্গে রয়েছেন। বিএনপির পক্ষ  থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য প্রার্থী ওসমান গনি শাহজাহান বিষয়টি মানতে না চাওয়ায়  শেষ পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতারা ওয়ার্ডটিকে উন্মুক্ত রেখেছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ের প্রত্যাশা করছেন।

দুই ওয়ার্ডে কোনো প্রার্থী নেই : এদিকে ডিএসসিসির দুটি ওয়ার্ডে  কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই বিএনপির। এর মধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে হাজী আলতাফ হোসেনকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আলতাফ হোসেনই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। ফলে ওয়ার্ডটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর