শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সেই সুতাং এখন মরা খাল

নদীর কান্না

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

সেই সুতাং এখন মরা খাল

প্রাচীনকাল থেকেই হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলাকে শস্য ও মৎস্য ভান্ডার বলা হয়ে থাকে। উপজেলার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে হবিগঞ্জ জেলাসহ সারা দেশে খাদ্যের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে আসছে লাখাইয়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য। কিন্তু সে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। পানি সংকটের কারণে লাখাইর বিস্তীর্ণ এলাকার ইরি বোরো ধানি জমি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা নদী বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। যতদিন যাচ্ছে ততই সুতাং নদী তার জৌলুস হারাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত খনন না করায় নদীটি শুকিয়ে গেছে। তাছাড়া উজানে গড়ে ওঠা শিল্প এলাকার কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নেমে আসার ফলে তলদেশে পলি জমে ও বর্জ্যরে কালো ময়লা জমাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে এক সময়ের খরস্রোতা সুতাং নদী। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে ওই নদীর পানিতে সেচ নির্ভর ইরি বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে না পারায় হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি। পানির অভাবে কৃষকরা ইরি বোরো ধান চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। এক সময়ের উত্তাল সুতাং নদীকে কেন্দ্র করে লাখাই উপজেলায় গড়ে উঠেছিল হাটবাজার। বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র খ্যাত বুল্লা বাজারসহ কয়েকটি হাটবাজারে সুতাং নদীর পানির ওপর দিয়ে লঞ্চযোগে ভৈরব থেকে নিয়ে আসা হতো পণ্যসামগ্রী। উপজেলার অধিকাংশ জেলে নদী থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে আগের মতো নদী থেকে মাছ আহরণ করতে না পারায় জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কৃষক, জেলে ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খননের দাবি করে এলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সরেজমিন দেখা যায়, লাখাইর সুতাং অংশে শাখাতি, ধলেশ্বরী, বেলেশ্বরীর কানাই, মনিখাই, বলভদ্র ও মন্দিরকলা খালসহ নদীগুলো ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। উপজেলার করাব ইউনিয়নের ফুলতলি গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক আরব আলী জানান, শিল্পবর্জ্যে নদীর তলদেশ ভরাটের পাশাপাশি তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কৃষি কাজের জন্য নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানির অভাবে এলাকার ইরি বোরো ধানি জমি চাষাবাদ করতে না পারায় আমাদের খাদ্য সংকটে ভুগতে হবে। একই গ্রামের সুশান্ত পাল (২০) বলেন, নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত জেলেরা। কালো কুচকুচে পানিতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। ফলে শত শত জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সদর ও মাধবপুর উপজেলায় কৃষিজমির ওপর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কলকারখানা। এসব কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশের খাল ও নদীতে ফেলার ফলে ভয়াবহ শিল্পদূষণ হচ্ছে। ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। এতে মানুষ শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ জটিল রোগে আক্রান্তসহ পানির অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানি কালো ও দুর্গন্ধময় হয়েছে। নদীতে আর মাছ পাওয়া যায় না, নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পানি সংকটে ভুগছেন। তিনি অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুতাং নদী খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। উপজেলাবাসীও সুতাং নদী খনন করে শিল্প বর্জ্যরে দূষণ থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর