বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
স্বর্ণপদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

এসএসসি পর্যন্ত পাঠক্রমে বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য বিভাজন দরকার নেই

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নবম শ্রেণি থেকেই বিষয়ভিত্তিক বিভাজন (বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য) তুলে দেওয়ার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা না থাকাই ভালো। এসএসসির পর গিয়ে যদি বিভক্ত হয়, সেটাই ভালো।’ গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসস। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর/সিজিপিএ প্রাপ্তদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনুষ্ঠানে দেশের ৩৬টি  বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন। এদের মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র এবং ছাত্রী রয়েছে ৮৮ জন। ২০১৭ সালে ১৬৩ জন শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে এজন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এখন সব সাবজেক্টই বিজ্ঞানভিত্তিক। সেটা ধীরে ধীরে চলেই এসেছে। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের (দেশে) ক্লাস নাইন থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোনো দরকারই নাই। কারণ, এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সব সাবজেক্টই তারা পড়তে পারে।’  তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা নেই। কারণ, বিজ্ঞান না পড়ার ফলে অনেক বিষয়েই শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আর আমাদের দেশে ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খান (পাকিস্তান আমলে) সরকারের সময় এটা করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনসংখ্যাকে আমরা যদি কারিগরি, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে সেইভাবে দক্ষ করে গড়তে পারি তাহলে আমাদের কোনো সমস্যাতো কোনোদিন হবেই না বরং আমরা অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারব। তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সে লক্ষ্যে একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেক্ষেত্রে আমরা কাউকেই অবহেলা করতে চাই না। যে কারণে, আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে অনার্স কোর্স চালু এবং প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কওমি মাদ্রাসাকেও আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দিয়েছি। কারণ, তাদেরও আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। একই ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসতে চাই।’

একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল, কলেজ এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। তিনি বলেন, যার যেভাবে শিক্ষা গ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করার দক্ষতা রয়েছে সে সেভাবেই শিক্ষালাভ করতে পারবে। সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন আমাদের মঞ্জুরি কমিশন খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত একটা অভিন্ন নীতিমালা করা।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় করেছি সেগুলোর যেন ভালোভাবে নজরদারি করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এটাকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেব।’ সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই।

 

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ টেকনোলজির শিক্ষার্থী মো. মোবারক হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের শারমিন সুলতানা অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর