বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি হবিগঞ্জ

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী বিএনপির সমস্যা কোন্দল

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে সরকারি দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকলেও বিএনপিতে রয়েছে চরম কোন্দল। এই কোন্দলের কারণে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করছে জেলা বিএনপি। গত সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করে বেশ দাপট দেখিয়ে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দূরে রেখেছেন। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করার পর বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে ৯টি উপজেলার মধ্যে কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জের ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সংসদ সদস্যরা এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। তবে জেলার ৪টি আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে একটি আসনে মতপার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার পর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে ১১ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। তার সঙ্গে বিগত কমিটিতে থাকা হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান স্বপদে বহাল থাকার জন্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সঙ্গে প্যানেল করে প্রচারণা চালিয়ে গেলেও পদ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চমক দেখিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিগত কমিটির সহ-সভাপতি সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের সব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী নিজেদের স্বার্থে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক পরবর্তীতে সিনিয়র সহ-সভাপতি রমজান মিয়া আওয়ামী লীগে যোগদান করে বেশ দাপটে রয়েছেন। অবশ্য তার ছেলে বিএনপি প্যানেলে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন অভিযোগ করেন, দলের তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ৩৪ নম্বর সদস্য আবদুল কাইয়ূম ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য মশক আলীকে সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে। একই ইউনিয়ন বিএনপি ৩৯ নম্বর সদস্য হুমায়ূন মিয়াকেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনদের এখনো আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। প্রায় বছরখানেক পূর্বে কাউন্সিলর আবুল হাসিমকে আহ্বায়ক, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র জি কে গউছকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। তবে এ কমিটি এখনো কোনো উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি গঠন করতে পারেনি। মাঝে-মধ্যে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা আলাদাভাবে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জের ২টি আসনে বিএনপি প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। আর ২টি আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা অংশ নেন। ৪টি আসনে তাদের ভরাডুবি হয়। নির্বাচনের পর জেলা বিএনপি কয়েকটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছ। আরেক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অপর যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সেলিম। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া। এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলা ড্যাব সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আহমদুর রহমান আবদালের নেতৃত্বেও আরেকটি গ্রুপ দলের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। বিএনপির হ-য-ব-র-ল অবস্থায় জেলা বিএনপির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি সৈয়দ মো. ফয়সল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর