শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
গার্মেন্টের ক্রয়াদেশ রক্ষা

এবার মার্কিন সহায়তা চাইল বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তৈরি পোশাক ক্রেতাদের অর্ডার বাতিলের একতরফা সিদ্ধান্ত বদলাতে এবার যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে এর সঙ্গে কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে : (করোনা সংকটে) বাস্তবতা এটিই- যদি গার্মেন্ট শিল্প টিকে থাকে, তবে বাংলাদেশ টিকে থাকবে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, কভিড-১৯ সংকটের পর গত এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি পোশাক কারখানার প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করেছে ক্রেতারা, যার বেশিরভাগই ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। এর আগে চলতি মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের সিদ্ধান্ত বদলাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, কিছু ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ড ও  খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর ক্রয়াদেশ বাতিল ও মূল্য কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এ ধরনের অনৈতিক ও অস্বস্তিকর পদক্ষেপ পোশাক ব্যবসার নৈতিকতার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

ওই চিঠি দেওয়ার পর বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছিলেন, তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছে, তার মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। নারীর ক্ষমতায়নে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পের কল্যাণে বিভিন্ন সহায়ক সেবা খাত যেমন- ব্যাংক, বীমা, আইটি, পরিবহন, পর্যটন  এরূপ অনেক খাত গড়ে উঠেছে। ফলে এই খাতের সংকট অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেছিলেন, ক্রেতাদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বদলাতে ইইউ-এর পর তারা মার্কিন প্রশাসনেরও সহায়তা চাইবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এর পর গত ২০ মে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার এল. রোজকে এই চিঠি পাঠান। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিলের যেসব মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের সিদ্ধান্ত বদলানোর বিষয়ে এবং বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পোশাক আমদানির বিষয়ে ক্রেতাদের প্রভাবিত করতে মার্কিন প্রশাসনের পাশাপাশি দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহায়তাও চাওয়া হয়। চিঠিতে টিপু মুনশি বলেন, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত বর্ধনশীল বাণিজ্য অংশীদার রাষ্ট্রের তালিকায় নাম উঠেছে বাংলাদেশের। দেশটির সঙ্গে মোট বাণিজ্য বেড়ে ৯ দশমিক ০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। তবে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) সেই ধারাবাহিকতায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হলেও এরপর করোনা মহামারী সবকিছুতেই ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। টিপু মুনশি বলেন, গার্মেন্ট শিল্পে ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল ও শিপমেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত বছরের পরের দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) রপ্তানি খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সংকটজনক পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। চিঠিতে রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের প্রচুর বিনিয়োগ এবং শ্রম আইন সংশোধনসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগগুলোও তুলে ধরা হয়।

সর্বশেষ খবর