বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

২০০ বছরের পুরনো কাইকারটেক হাট

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

২০০ বছরের পুরনো কাইকারটেক হাট

কী নেই এই হাটে। কী চান আপনি। কোনো কিছুর অভাব নেই। যারা শুধু ঘুরতে যাবেন তারাও কিছু না কিনে ফিরে আসতে পারবেন না। প্রায় ২০০ বছর ধরে চলছে এই হাটের যাত্রা। এমন একটি হাটের নাম ‘কাইকারটেক হাট’। প্রতি রবিবার সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বসে এই হাট। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দোকান বসেছে, পসরা সাজানো হয়েছে হাটে। দলে দলে লোকজন  আসছেন কেনাকাটা করতে। কী নেই এই হাটে! কবুতর, জাল, দা, কুড়াল, জামা-কাপড়, গরু-ছাগল, মিষ্টি, মাছ, হাঁস-মুরগিসহ নিত্য ব্যবহার্য সবকিছুই রয়েছে। আম, জাম লিচু, দুধ, কলাসহ গৃহস্থের ঘরের একটা দুটা কাঁঠাল। খাবার জিনিস থেকে শুরু করে ঘর বানানোর আসবাব পত্র। শখ করে মাছ ধরার জাল কিংবা ছাই। পাওয়া যায় ডিঙ্গি নৌকা। কিংবা সবুজ বনায়নের জন্য গাছ গাছালী। আরও পাওয়া যায় অনেক শখের জিনিস। বর্ষাকালে জমজমাট হয়।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হাটটির চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ অপরূপ। হাটের পাশেই রয়েছে কাইকেরটেক ব্রিজ। ব্রিজ থেকে তাকালেই চোখে পড়বে অবারিত সবুজ। হাটে বিক্রি হওয়া মজার মজার খাবারের স্বাদ মুগ্ধ করে আগন্তুকদের। এ হাটের অন্যতম আকর্ষণ বিশেষ ধরনের এক মিষ্টি। এ মিষ্টির জন্য শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, আশপাশের জেলাগুলো থেকেও মানুষ আসেন এখানে। নানা বয়সের মানুষের আগমন। বিক্রেতারা তাদের পণ্য সাজিয়ে রেখেছেন মাটির ওপর বিছানো হোগলা পাতার বিছানায়।  বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এই হাটে পুতা মিষ্টি নামে এক প্রকার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পাওয়া যায়, যার স্বাদ মুখে লেগে থাকার মতো। মিষ্টি দেখতে স্বাভাবিক মিষ্টির চেয়েও কিছুটা বড়। অনেকটা শিলপোতার মতো।

 মিষ্টি বিক্রেতা রাজীব ঘোষ জানান, কাইকারটেকের হাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসে মিষ্টি কিনতে। একটা মিষ্টির ওজন প্রায় আধাকেজি। তবে অর্ডার দিলে এককেজির পরিমাপের একটা পুতা মিষ্টি তৈরি করে দেই আমরা। শুধু মিষ্টি নয়, এখানে বিক্রি হয় হাসেম মিয়ার বিশেষ ঝালমুড়ি, বুট, মোয়াসহ নানা ধরনের লোকজ খাবার। এ ছাড়াও প্রায় ৫০ পদের মাছের শুঁটকিও এখানে খুব নামকরা। কম দামে ভালো মানের কোষা নৌকা বিক্রি হয় এ হাটে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলার মানুষের কাছে এটি কাইকারটেক হাট নামেই পরিচিত। স্থানীয়দের দাবি, ঐতিহাসিক এই কাইকারটেক নৌকার হাটটি প্রায় দুই থেকে আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। হাটের প্রাচীন নিদর্শন ও পাতা ঝরা কড়ই গাছগুলো যেন হাটের বয়সকালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্নটা ছিল এক বয়স্ক ব্যক্তির কাছে, ‘চাচা কাইকারটেকের এই হাটের বয়স কত?’ উনি উত্তর দেওয়ার আগেই একজন যুবক মাহতাব মিয়ার উত্তর- দাদার মুখে হুনছি ব্রহ্মপুত্র নদের পারের এই হাটের বয়স প্রায় ২০০ বছরের মতো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর