শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা হতে পূর্বে ৮নং মালিঘাট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় সুইতলা মল্লিকপুরে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ। দুই একর আট শতক জমি জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব। এর উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। বর্তমানে বটগাছটি খ- খ- হয়ে ৫২টি বটগাছে রূপ নিয়েছে। বিবিসির জরিপে ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ বলা হয়েছে। প্রায় ৩০০ বছর আগের এই গাছের উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানাতে পারেনি এলাকাবাসী। বাস্তবে এই এলাকায় সুইতলা নামক কোনো স্থানের অস্তিত্ব নেই। তাই বয়োবৃদ্ধদের ধারণা পথশ্রান্ত পথিকরা যখন এই মনোরম স্থানে শুয়ে বসে বিশ্রাম নিত, তখন  থেকেই অনেকের কাছে এটি সুইতলা বটগাছ বলে পরিচিতি লাভ করে। আর এ থেকেই নামকরণ হয় সুইতলা বটগাছ। কারো কাছে এর অবস্থান বেথুলী  মৌজায় তাই বেথুলী বটগাছ হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। মল্লিকপুর গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি বটগাছের পাশে দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করে। মল্লিকপুরের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কেন্দ্রর নামেই মল্লিকপুরের বটগাছ হিসেবে এটি পরিচিত লাভ করেছে। ২৫০-৩০০ ফুট উচ্চতায় ফাঁকা মাঠের মধ্যে দীর্ঘদিনের এ বটগাছটি একের পর এক ঝুরি ছেড়ে বিরাট আকার ধারণ করে। বিচ্ছিন্নভাবে চার হেক্টর জমিজুড়ে গাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই বটগাছের নিচে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পূজা হয়। এই বটগাছের জন্ম যে কুয়ার পাড়ে সেই কুয়া কে, কবে খনন করেছিলেন তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। মল্লিকপুর গ্রামের অনেকেই জানান, যে জায়গায় কুয়া ছিল ওই জায়গায়টি ১৯২৬ সালে রেকর্ডের পূর্বে বেথুলী গ্রামের ভূষণ সাহাদের পরিবারের কারো নামে ছিল। বর্তমানে পুরোটাই সরকারের খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুয়ার পাড়ের সেই বটগাছটি কালক্রমে ‘ডালপালা’ নেমে পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ দখল করে নিয়েছে। মূল গাছ এখন আর নেই। বর্তমানে প্রায় ২০০/৩০০ ডালপালা নেমে প্রায় ১১ একর জমি দখল করে নিয়েছে। বটগাছটিকে কেন্দ্র করে পাশেই বাংলা ১৩৬০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেথুলী বা মল্লিকপুরের বাজার। এই বাজারের প্রথম দোকানদার ছিলেন মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত আলী, বেথুলী গ্রামের স্বরজিত কুমার সাহা, মমতাজ ডাক্তার, মল্লিকপুরের মুনছুর বিশ্বাস, মথুরাপুর গ্রামের হামিদুল। বটতলায় কালীপূজার জন্য একটি স্থায়ী পিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। চাপরাইল গ্রামের গৌরপদ অধিকারী এবং হাজারী লাল অধিকারীর আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মিত হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী মৌজার সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ। ১৯৯৮ সালের দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সুশেন চন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় সেখানে একটি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। বটগাছের চারপাশ ঘিরে প্রাচীর নির্মাণের ব্যবস্থাও করেন তিনি। ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা গাছটি পরিদর্শন করে  গেছেন। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর বটগাছের ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে অনেক স্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা আসেন। এর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ১৯৯০ সালেই বটগাছের পাশেই প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেষ্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়। এর জন্য মল্লিকপুরের মৃত জহর আলীর স্ত্রী মোছা. কুন্টি বিবি ৩২ শতক জমি জেলা পরিষদের নামে দানপত্র লিখে দেন। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান,  জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থেকে বন বিভাগ প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ বটগাছটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে ২০০৯ সালে। গাছটির আয়তন বৃদ্ধির জন্য নতুন করে দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গাছটি রক্ষার জন্য প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর