প্রায় ৬০০ বছর আগের দিনাজপুরের ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অতি প্রাচীন চেহেলগাজী মসজিদটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও ভগ্নদশা অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে, ভগ্নদশা এই মসজিদটিকে সংরক্ষণ করা দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় মুসল্লিরা। তবে এই মসজিদের পাশে তৈরি হয়েছে আরেকটি মসজিদ। অনেকে এখনো নামাজ আদায় করেন সেখানে। দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে দিনাজপুর শহর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে চেহেলগাজী গ্রামে অবস্থিত চেহেলগাজী মাজার। মাজারের সঙ্গেই রয়েছে প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীনতম মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদটির দেয়াল ছাড়া আর কোনো অবশিষ্ট নেই। তবে মিহরাবের কাছে কিছু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। পোড়ামাটির ফলকগুলোতে ফুল, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত মোটিফ লক্ষণীয়। এগুলোও খুলে পড়েছে। বর্গাকার মসজিদটির মূল স্তম্ভের ওপর একটি এবং পূর্বদিকের বারান্দার ওপর সম্ভবত তিনটি গম্বুজ ছিল। সংস্কারের অভাবে মেহরাবটির অনেকাংশ ভেঙে গেছে। মূল মেহরাবের দুপাশে দুটি ছোট মেহরাব আছে, সেগুলোর অবস্থাও একই। মসজিদটির সামনে একটি সুসজ্জিত দরজা ভেদ করে বারান্দা, এরপর সামনের দিকে তিনটি দরজা, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দরজা আছে। মসজিদটি ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশের মসজিদে স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। তবে ওই ভগ্নদশা মসজিদে অনেকে এসে নামাজ পড়েন এবং প্রতি শনিবার ওখানে জিকির-মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জনশ্রুতি রয়েছে ৪০জন গাজীকে (ধর্মযোদ্ধা) একত্রে এখানে সমাহিত করা হয়। এ জন্য এ স্থানের নাম হয়েছে চেহেল (চল্লিশ) গাজী। মাজার সংলগ্ন পূর্বদিকে একটি, দক্ষিণ দিকে তিনটি বাঁধানো প্রাচীন কবর রয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চেহেলগাজী মসজিদ। এটি দিনাজপুরের প্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত। মসজিদের সময়কাল নির্দেশক তিনটি শিলালিপির একটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ সালের ১ডিসেম্বর ইং) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহ-এর রাজত্বকালে (১৪৫৯-১৪৭৪ সাল ইং) তার উজির ইকরাব খানের নির্দেশে পুর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুক (দিনাজপুর) পরগণার শাসনকর্তা উলুঘ নুসরত খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।
চেহেলগাজী মাজারের সময়কাল নির্দেশক কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। তৎকালীন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মি.ওয়েস্টমেকট ১৮৪৭ সালে চেহেলগাজী মসজিদ থেকে তিনটি শিলালিপি উদ্ধার করেন। ওই শিলালিপি থেকে জানা যায় ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে চেহেলগাজী মসজিদটি নির্মাণ করার সময় মাজারটি (রওজা) সংস্কার করা হয়।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, তারা ছোটবেলা থেকেই দেখছেন মসজিদটি। তখন যেভাবে দেখেছেন, এখনো সেভাবেই আছে। ভেঙে গিয়ে দিন দিন আরও ছোট হয়ে আসছে চেহেলগাজী মাজারের এই জামে মসজিদ। এটি দিনাজপুরের ঐতিহ্য। একে রক্ষার দায়িত্ব সবার।