রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এমপি আসলামের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তীর ও প্লাবনভূমি দখল করে মায়িশা গ্রুপের ‘মায়িশা পাওয়ার প্লান্ট’ ও ‘আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন’ গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৈরি প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন মায়িশা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক। গতকাল নিজ অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আইনবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে আসলামুল হকের দুই প্রতিষ্ঠান নদীর তীর ও প্লাবনভূমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মন্তব্য করে অবিলম্বে তা উচ্ছেদের সুপারিশ করে নদী রক্ষা কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তীরভূমি, প্লাবনভূমি ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ড্যাপের আওতাভুক্ত জমিসহ মোট ৫৪ দশমিক ০১৭৮ একর জমিতে অবৈধভাবে এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ‘মায়িশা পাওয়ার প্লান্ট’ ও ‘আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন’-এর অবস্থান যৌথ জরিপের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টে দাখিলের জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। আসলামুল হক বলেন, নদী কমিশন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মনগড়া মতামত ও সুপারিশ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নদীর তীর ও প্লাবনভূমি দখলের অভিযোগ তুলে মায়িশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্ছেদের সুপারিশ করেছেন। অথচ, কেরানীগঞ্জের ওয়াশপুর ও ঘাটারচর এবং সাভারের শ্যামলাপুর মৌজায় এসব জমি মায়িশা গ্রুপ ২০১০ সাল থেকে সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডভুক্ত ব্যক্তিমালিকদের দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করে ক্রয় শুরু করে। এসব জমির খাজনাও ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন মন্তব্য করে বলেন, যৌথ জরিপ ও আইনে যদি তার বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে সব স্থাপনা সরিয়ে ফেলবেন। ঢাকা-১৪ আসনের এ সংসদ সদস্য বলেন, নদী কমিশন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), জরিপ অধিদফতর, সহকারী কমিশনার (ভূমি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের কারও মতামতকে আমলে না নিয়ে শুধুমাত্র রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিকল্পনাবিদ নবায়ন খীসার ‘বন্যা প্রবাহ এলাকা’ ও ‘জলাশয়’ হিসেবে দেওয়া মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে অযৌক্তিক ও হীন উদ্দেশ্যে এমন মনগড়া সুপারিশ করেছে। জমি ক্রয়ের পর অবকাঠামো উন্নয়নের সময় কোনো সংস্থা বাধা দেয়নি। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) আরিফ উদ্দিনও নদী রক্ষা কমিশনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যের অপলাপ মাত্র। নদীর ফোরশোর তীর থেকে ৫০ মিটার। আমার বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরও অনেক দূরে অবস্থিত। অথচ, তিনি মন্ত্রণালয়কে ভুল বুঝিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কোনো নোটিস না দিয়ে লোকজন নিয়ে বেআইনিভাবে চলমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর, তেলের পাইপ লাইন, জেটি, ভাসমান পল্টুন, গ্যাংওয়ে, তেলের ট্যাংক গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। রাজউকের পরিকল্পনাবিদ নবায়ন খীসা মায়িশা গ্রুপের ক্রয়কৃত জমিগুলো ড্যাপে বন্যা প্রবাহ এলাকা ও জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অথচ, মায়িশা গ্রুপের ক্রয়কৃত দাগগুলোর লাগোয়া আরও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি আছে। সেই সব জমি না দেখে তিনি শুধু তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ক্রয় করা জমিগুলোকে কেন বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করলেন? মূলত, সংসদ সদস্য হিসেবে আমার সুনাম ক্ষুণœ করতেই একটি পক্ষ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

‘আপনি যৌথ জরিপের দাবি করেছিলেন। যৌথ জরিপের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। ভূমি জরিপ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির স্বাক্ষর আছে। তাহলে কেন এটা প্রত্যাখ্যান করছেন?’-সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে আসলামুল হক বলেন, নদী কমিশন জরিপ করতে পারে না। সুপারিশ করতে পারে। কমিশন এখানে সব প্রতিষ্ঠানের মতামতকে প্রাধান্য দেয়নি। যেসব প্রতিষ্ঠানের জরিপ করার ক্ষমতা আছে তারা যৌথ জরিপ করুক। আমি মেনে নেব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর