গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে শাস্তি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা শিক্ষক রাজনীতির শিকার আমি। ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা চিঠির ওপর ভিত্তি করে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রকৃত সত্য উদ্?ঘাটন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সামিয়া রহমান। বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সামিয়া রহমান আরও বলেন, শিকাগো জার্নাল থেকে একটি অভিযোগ এসেছে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত শুরু করে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে- শিকাগো জার্নালের যে অভিযোগ ধরে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো, এটি মিথ্যা, বানোয়াট ও তৈরি করা। বলা হয়েছে, শিকাগো জার্নালের ‘অ্যালেক্স মার্টিন’ মেইল করে এ অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু এ জার্নালের সম্পাদক আমাকে জানিয়েছেন, সেখানে অ্যালেক্স মার্টিন নামে কেউ নেই। জার্নাল থেকে তারা এমন চিঠি পাঠাননি বলেও জানিয়েছেন। তাহলে এ মেইল পাঠাল কে? টেমপোরারি এ মেইল তৈরি করা হয়েছে। পরে এটি বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা চিঠির ওপর ভিত্তি করে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এটা কি ষড়যন্ত্রমূলক বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়?
এ শিক্ষক বলেন, আমি কাউকে আইডিয়া দিলেই কেন আমার নামে সেটি ছাপা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কাছে আমি ন্যায়বিচার পাইনি। চার বছর ধরে আমাকে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোন লেখা এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে গেলে সেটি রিভিউয়ারের কাছে পাঠানো হয়। রিভিউয়ার যদি সংশোধনযোগ্য মনে করে, তবে সেটি আবার এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে ফেরত পাঠায়। বোর্ড সেটি পাঠায় লেখকের কাছে। তিনি সংশোধন করে দিলে সেটি আবারও যায় বোর্ডের কাছে। পরে এটি ছাপা হয়। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে লেখা জমা দেওয়া থেকে ছাপা পর্যন্ত আমার সংশ্লিষ্টতার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। তদন্ত কমিটিও এর প্রমাণ দিতে পারেনি। ট্রাইব্যুনালও বলেছে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে ন্যায়বিচার হয়নি। ট্রাইব্যুনালের আহ্বায়ক অধ্যাপক রহমতউল্লাহও বলেছেন, লেখাটিতে কোনো প্লেজারিজম হয়নি। ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও বলেছেন, ‘এটা প্লেজারিজম না, সাইটেশন এরর।’ সামিয়া রহমান বলেন, ট্রাইব্যুনাল তো রিভিউয়ার ও এডিটরিয়াল বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কেন এড়িয়ে গেল? এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি শুরু থেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিল। কারণ কমিটির প্রতিটি সভা শেষ হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যেই মিডিয়ায় খবর চলে এসেছে। তারা কি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন? তাদের সন্দেহজনক আচরণ দেখে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি।
তিনি বলেন, আমি মারজানকে (অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান) বিদেশ থেকে বলেছিলাম, লেখাটি জমা দেওয়ার আগে আমি দেখব। কিন্তু আমি বিদেশে থাকা অবস্থাতেই লেখাটি ছাপা হয়ে যায়। আমি দেশে এসে দেখলাম, মারজান লেখায় প্লেজারিজম করেননি। তিনি ‘মিশেল ফুকো’র উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা দিলেও ফুটনোট দেননি। এক্ষেত্রে স্ট্রাকচার ফলো করেননি তিনি। কিন্তু এটা দেখার কথা ছিল রিভিউয়ারের। আমি লেখাটি প্রত্যাহার করতে ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছিলাম। কারণ আমার অজান্তে লেখাটি ছাপা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পূর্ণ একপেশে, বিদ্বেষপ্রসূত ছিল। এডিটরিয়াল বোর্ড তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ, এটিও তদন্ত কমিটি বলেছে।
সামিয়া রহমান বলেন, আমার কোনোরকম বক্তব্য বা ডকুমেন্ট না নিয়ে সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মিথ্যা, বানোয়াট চিঠির ওপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে কেন আমাকে ডিমোশন দেওয়া হলো, পক্ষান্তরে মারজানের শুধু প্রমোশন আটকে রাখা হলো? তার কেন ডিমোশন হলো না। আমার আর মারজানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালে ২০১৯ সালে লিয়েনের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তদন্তাধীন শিক্ষককে ছুটি দেওয়া হবে না বলে আবেদনটি ছুড়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে মারজানকে উপাচার্যের অনুমতি ও সুপারিশ নিয়ে স্কলারশিপ দিয়ে আমেরিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, শিক্ষক সামিয়া রহমানের দুলাভাই সৈয়দ ফিরোজ আহমেদ ও ‘অপরাজেয় বাংলা’র সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু।