শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

কুমির কালাপাহাড় অর্ধশত ডিম পেড়েছে

বাগেরহাট প্রতিনিধি

কুমির কালাপাহাড় অর্ধশত ডিম পেড়েছে

দেশের দ্বিতীয় আধ্যাত্মিক রাজধানী বাগেরহাটে হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজারের দিঘিতে মিঠাপানির বিলুপ্ত প্রজাতির কুমির ‘কালাপাহাড়’ অর্ধশত ডিম পেড়েছে। মাজারের বিশাল দিঘির পুবপাড়ে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে কুমিরটি মাটি খুঁড়ে ডিম পাড়ে। মাজারে আসা খানজাহান (রহ.)-এর ভক্ত-আশেকান ও পর্যটকরা কুমিরের ডিম পাড়ার খবর পেয়ে ভিড় করছেন দিঘির পুবপাড়ে বীণা আক্তারের বাড়িতে। কালাপাহাড় এখন ডিমে ‘তা’ দিচ্ছে। কুমিরের এসব ডিম থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটবে বলে আশা করছেন মাজারের খাদেমসহ প্রাণিবিশেষজ্ঞরা। তবে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও বয়স্ক হওয়ায় গত ২০ বছরে মাজারের দিঘির কুমিরের ডিম থেকে কোনো বাচ্চা ফোটেনি। এতে দেশের একমাত্র খানজাহানের দিঘিতে শত  শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় বসবাস করা মিঠাপানির কুমির বিলুপ্তির শঙ্কা বাড়ছে বলে প্রাণিবিশেষজ্ঞদের অভিমত। খানজাহানের দিঘির পুবপাড়ের বাসিন্দা বীণা আক্তার জানান, শুক্রবার ভোররাত ৪টার দিকে মা কুমির কালাপাহাড় তার বাড়ির উঠানে উঠে দাপাদাপি করতে থাকে। তারা ঘর থেকে বের হলে কুমিরটি ডিম পাড়তে বাড়ির আঙিনায় দিঘির পাড়ে গিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে। মাটি খোঁড়া শেষ হলে কুমিরটিকে একে একে অর্ধশত ডিম পেড়ে ধুলামাটি দিয়ে ওইসব ডিম ঢেকে রাখতে দেখা যায়। এ সময় তিনি ভালো করে দেখতে গেলে কুমিরটি তাকে ধাওয়া করে। পরে ডিমগুলোয় ‘তা’ দেওয়া শুরু করে। সকালে মা কুমিরটিকে তারা মুরগির মাংস খেতে দিয়েছেন। এর আগে খানজাহান আলীর দিঘিতে বংশপরম্পরায় বাস করে আসা ৫০০ ও ৬০০ বছর বয়সী দুটি পুরুষ ও মহিলা প্রজাতির কুমির মারা গেছে। বর্তমানে এ দিঘিতে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে পুরুষ ও মহিলা প্রজাতির মাত্র দুটি কুমির রয়েছে। এ দুটি কুমির মারা গেলে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মিঠাপানির কুমির। খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, ‘আমরা মাজারের খাদেম, খানজাহানের ভক্ত-আশেকানসহ সবাই আশা করছি এবার কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে।’

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান জানান, খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার দিঘির কুমিরের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও বয়স্ক হওয়ায় ২০ বছরে ধরে ডিম থেকে কোনো বাচ্চা ফুটছে না। মা কুমির কালাপাহাড় ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে রেখেও বাচ্চা ফোটানো যায়নি। পুরুষ কুমির ধলাপাহাড়ের ফার্টিলিটি না থাকায় মা কুমিরটির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছে না। দেশ-বিদেশের কুমির বিশেষজ্ঞরা এ মাজারে এসে কুমির পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা বলেছেন দ্রুতই প্রাপ্তবয়স্ক একটি মিঠাপানি প্রজাতির পুরুষ কুমির বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে এ দিঘিতে ছাড়তে হবে। তা না হলে এ দিঘির কুমিরের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর