শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়াল

দুই দিনে প্রাণ গেল ১৯০ জনের, দুই মাসের ব্যবধানে সাত গুণ বাড়ল মৃত্যু, আইসোলেশন নিশ্চিত হচ্ছে না সব রোগীর

শামীম আহমেদ

করোনায় মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়াল

বছর ঘুরে চলতি এপ্রিলে ভয়াবহ রূপে হাজির হয়েছে করোনাভাইরাস। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের ১৩ মাস ৭ দিনের মাথায় এসে গতকাল দেশে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজার। গত দুই দিনেই প্রাণ গেছে ১৯০ জনের। এর মধ্যে পয়লা বৈশাখের দিন সর্বোচ্চ ৯৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় আরও ৯৪ জনের, সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৪ হাজার ১৯২ জনের দেহে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯৪ জনের মধ্যে ৯০ জন হাসপাতালে ও চারজন বাড়িতে মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮১ জনে। গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে মোট ৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জনের দেহে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৯১৫ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৫ লাখ ৯৭ হাজার ২১৪ জন।

সর্বোচ্চ মৃত্যু এপ্রিলে : করোনাভাইরাস সংক্রমণে চলতি এপ্রিলের মতো মৃত্যু এর আগে কখনো দেখেনি দেশের মানুষ। ১৫ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৫ জনের। গড়ে দৈনিক মারা গেছেন ৬৯ জন। মাসের হিসাবে এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় গত বছরের জুলাইয়ে। ওই

মাসে দৈনিক গড়ে ৪০ দশমিক ৭৭ জনের মৃত্যু হলেও চলতি এপ্রিলে তার চেয়ে ২৮ জন বেশি মারা যাচ্ছেন প্রতিদিন। এদিকে গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে এসে দৈনিক মৃত্যু বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে দৈনিক মারা গেছেন ১০ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে সংক্রমণ শুরুর পর প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। ওই মাসে মারা যান পাঁচজন। এপ্রিলে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩ জনে। মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে ১ হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে ১ হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে ১ হাজার ১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন, ডিসেম্বরে ৯১৫ জন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১ জন ও মার্চে ৬৩৮ জন মারা যান। আর এপ্রিলের ১৫ দিনেই হাজার ছাড়িয়েছে মৃত্যু।

আইসোলেশনের খবর নেই ৮১ ভাগ রোগীর : করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হু হু করে বাড়লেও নিশ্চিত হচ্ছে না সব রোগীর আইসোলেশন। সুস্থ ও মৃত বাদে দেশে গতকাল চিকিৎসাধীন করোনা রোগী ছিলেন ১ লাখ ৬৭ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৬ হাজার ২৪৮ জন। প্রায় ৯৪ ভাগ রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এর মধ্যে মাত্র ১৭ হাজার ৩৬৪ জন রোগীর আইসোলেশন নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর, যা হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসাধীন রোগীর মাত্র ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজারের ওপরে রোগী শনাক্ত হলেও আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছে ৬৫৭ জন।

আইসিইউ নিয়ে হাহাকার : করোনার এবারের ঢেউয়ে সংকটাপন্ন রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাহাকার পড়ে গেছে আইসিইউ নিয়ে। টালমাটাল চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে মিলছে না আইসিইউ। পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। কেউ কেউ ২/৩ দিন অপেক্ষায় থেকে গভীর রাতে সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে নামসর্বস্ব বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন আইসিইউর জন্য। এই অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি করোনা হাসপাতালগুলোয় সাধারণ শয্যার সঙ্গে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা যুক্ত করে আইসিইউ সংকট মেটানোর চেষ্টা চলছে। গতকাল ঢাকার অধিকাংশ হাসপাতালে ছিল আইসিইউ সংকট। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটে ছিল ২০টি আইসিইউ। গতকাল ৯৫টি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলাযুক্ত শয্যা যোগ করে মোট ১১৫টি আইসিইউ করা হয়। এর মধ্যে ফাঁকা ছিল মাত্র ১৭টি। সারা দেশে আইসিইউ/সমতুল্য শয্যা বাড়িয়ে ৮২৫টি করা হলেও গতকাল ফাঁকা ছিল মাত্র ১৭৩টি।

মৃত্যু বেশি পুরুষ ও বৃদ্ধের : এখন পর্যন্ত করোনায় ৭৪ দশমিক ৩৯ ভাগ মৃত্যুই হয়েছে পুরুষের। গতকাল পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন ৭ হাজার ৪৯৯ জন ও নারী মারা গেছেন ২ হাজার ৫৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৯৪ জনের মধ্যে ৬৪ জন ছিলেন পুরুষ ও ৩০ জন নারী। বয়স বিবেচনায় গতকাল পর্যন্ত ৫৬ দশমিক ২৯ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে ষাটোর্ধ্ব মানুষের। মোট মৃতের ৫ হাজার ৬৭৫ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ২ হাজার ৪৮০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ১ হাজার ১২৫ জন চল্লিশোর্ধ্ব ও শূন্য থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮০১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জন ষাটোর্ধ্ব, ২৫ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ১৪ জন চল্লিশোর্ধ্ব ও তিনজন ত্রিশোর্ধ্ব মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সর্বাধিক মৃত্যু ঢাকায়, সর্বনিম্ন ময়মনসিংহে : এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে ও সর্বনিম্ন ২ দশমিক ১০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ৬৯ জন ঢাকা, ১২ জন চট্টগ্রাম, ছয়জন রাজশাহী, তিনজন খুলনা, দুজন বরিশাল এবং একজন করে সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

সর্বশেষ খবর