হাছিনা বেগম। বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ায়। একই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হাজিবাড়ির হামিদ হোছনের স্ত্রী। অপরাধীর নামের প্রথম অংশ ও স্বামীর সঙ্গে মিল থাকলেও মা-বাবার নামের সঙ্গে রয়েছে অমিল। এই নামের ভুলের কারণেই দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস ২০ দিন পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। হাছিনা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কারা-ফটকের সামনে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-ছেলে।
তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল সেই হাছিনা বেগম চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁইয়ার ভার্চুয়াল আদালত এ মুক্তির আদেশ দেয় বলে জানান হাছিনা বেগমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালত হাছিনা বেগমকে কারাগার থেকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো হাতে পাইনি। এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বালাম বইয়ে সংরক্ষিত ছবি দেখে প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার ও সাজা ভোগ করা হাছিনা বেগম এক নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে কারা কর্তৃপক্ষ।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালত থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কারাগারে আসার পর দীর্ঘদিন ধরে কারা ভোগ করা হাছিনা বেগমকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারা-ফটকের সামনে হাছিনা বেগমের আইনজীবী ও ছেলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি। মুক্তি পাওয়া হাছিনা বেগমের ছেলে শামীম নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের দুই বোন এক ভাইয়ের সুন্দর পরিবার। আমাদের এলাকায় আমার মা পানের দোকানের আয় দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন। এক রাতে হঠাৎ করে টেকনাফ থানা পুলিশ বাড়ি থেকে মাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। মায়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা কখনো ছিল না। এরপর থেকে গত এক বছর সাড়ে চার মাস মা কারাগারে। আমি ও বড় বোন মানুষের বাড়িতে কাজ করি। ছোট বোন নানির কাছে থাকে। কয়েক দিন ধরে কারাগারে মা অসুস্থ ছিলেন।’ মায়ের মুক্তিতে খুবই খুশি বলে জানান তিনি। জানা গেছে, মাদক মামলায় ছয় বছর সাজার আদেশ হয়েছিল হাসিনা আক্তারের। স্বামী একই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হাজিবাড়ির হামিদ হোসেন। এই হাসিনা আক্তারের জায়গায় ১ বছর ৪ মাস ২০ দিন ধরে সেই সাজা ভোগ করে আসছিলেন হাছিনা বেগম। মা-বাবার নামে মিল না থাকলেও একই গ্রামের ইসমাইল হাজিবাড়ির অপর হামিদ হোছনের স্ত্রী হাছিনা বেগম। এ বিষয়টি সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পঞ্চম আদালতের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। আদালত সূত্র জানায়, কর্ণফুলী থানা ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এ মামলার আসামি হাসিনা আক্তার ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কারাগারে যান। পরে হাই কোর্ট থেকে একই বছর ২৭ নভেম্বর জামিন নেন। ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর পঞ্চম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী রায়ে আসামি হাসিনা আক্তারকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে আরও জানা যায়, প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০১৭ থেকে প্রায় ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। সাজা হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর পুলিশ হাছিনা বেগমকে কারাগারে পাঠায়। কারা রেজিস্টারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই।