শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

গণপরিবহনে শিকেয় উঠেছে স্বাস্থ্যবিধি

ঠেলেঠুলে উঠছেন যাত্রীরা, মাস্ক পরছেন থুতনিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণপরিবহনে শিকেয় উঠেছে স্বাস্থ্যবিধি

রাজধানীতে বাসে উঠতে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন চালুর অনুমতি দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই কোথাও। বাসকর্মী ও যাত্রীর অধিকাংশই পরছেন না মাস্ক। অনেকে জরিমানা এড়াতে মাস্ক রাখলেও তা নামিয়ে রাখেন থুতনিতে। আবার কিছু যাত্রী সচেতনভাবে মাস্ক পরলেও অন্যদের কারণে তাদের মধ্যে দেখা গেছে আতঙ্ক। এ ছাড়া গত বছর রাজধানীর গণপরিবহনের দরজায় চালকের সহকারীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেলেও গতকাল দুপুরে কোনো বাসেই তেমনটা চোখে পড়েনি। এদিকে ঈদের পর আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। দেশের সীমান্তের জেলাগুলোয় ভারতফেরত অনেকের দেহে মিলেছে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। চট্টগ্রামে ভারতফেরত বাংলাদেশির শরীরে পাওয়া গেছে আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্তের জেলা ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সব রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশনে নেওয়ার পাশাপাশি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গণপরিবহন, খাবারের রেস্তোরাঁ, হাট-বাজার সবখানেই উপেক্ষিত সরকারের নির্দেশনা। উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো থেকে নামা অধিকাংশ যাত্রীর মুখেই নেই মাস্ক। বাসে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা থাকলেও প্রতিটি বাস থেকে ৪০ জনের বেশি যাত্রী নামতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে নিশিত জাহান নামে সুন্দরবন পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, ‘কাউন্টার থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়েই বাস ছেড়েছিল। কিন্তু ফেরিঘাটে এসে যাত্রী দিয়ে বাস ভর্তি করে ফেলেছে। বাসের মধ্যে অনেকেরই মুখে মাস্ক ছিল না। একেকজন কাশি দিলেই কলিজা কেঁপে উঠছিল। এখন আমাকেই করোনা ধরল কি না সে ভয়ে আছি।’ তবে বুধবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, তুরাগ, ভিক্টর ক্ল্যাসিক, রাইদা, অছিম পরিবহনসহ প্রায় সব বাসই অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলছে। তবে অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকেরই তা নামানো ছিল থুতনিতে। প্রতিটি বাসের চালক ও সহকারীর মুখে মাস্ক দেখা গেলেও তা ছিল নামকাওয়াস্তে। সদরঘাট অভিমুখী ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১২-০৬৫৯) সহকারীকে মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ যাত্রী ডাকতে হয়, মাস্ক পরে ডাকলে যাত্রীরা শোনে না।’ মাস্ক ছাড়া বাস থেকে নামা এক যাত্রীর বক্তব্য, ‘মাস্ক পকেটে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসে তাই পরি না।’

এদিকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন শ্রেণি। শাহজাদপুরে মাস্ক পরে বাসে ওঠার অপেক্ষায় থাকা স্যানিটারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু নিজে সচেতন হয়ে লাভ কী? বাড়িতে বৃদ্ধ মা আছেন, শিশু আছে। অন্যদের কারণে বাসে উঠতে ভয় লাগে। বাধ্য হয়ে উঠতে হয়। এ ছাড়া দুপুরে যাত্রী কম থাকায় অর্ধেক আসনে যাত্রী বহন করছে, সকাল ও সন্ধ্যায় এ চিত্র থাকে না।’ করোনা সংক্রমণ রোধে বর্তমানে দেশে চলছে লকডাউন। প্রথমে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পরে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন ও যাত্রীসহ সবাইকে মাস্ক পরার পাশাপাশি সব স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একই শর্তে ঈদের পর দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতিও দেওয়া হয়। প্রথম কয়েকদিন মোবাইল কোর্টে জরিমানার ভয়ে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেলেও এখন বদলে গেছে সে চিত্র।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর