বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

১১ বছরে বাস্তবায়ন একটি প্রকল্প

মানিক মুনতাসির

১১ বছরে বাস্তবায়ন একটি প্রকল্প

২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়নের নতুন ধারণা নিয়ে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর অধীনে কাজ শুরু করে বর্তমান সরকার। ২০১০ সালে এসে এ-সংক্রান্ত একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা হয় পিপিপি কর্তৃপক্ষের। প্রথম দিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে পিপিপি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হলেও সময়ের ব্যবধানে তা এগিয়েছে কচ্ছপ গতিতে। ফলে গত ১১ বছরে পিপিপির অধীনে শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে একটি মাত্র প্রকল্প। এ মুহূর্তে আরও ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। আর বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পটি হলো কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। এটি দুটি হাসপাতালে বাস্তবায়ন হয়েছে- ন্যাশনাল কিডনি হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল ও হাসপাতাল।

৩ জুন সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উপস্থাপিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার তথ্যানুযায়ী আগামী বছরের (২০২২) জুনের মধ্যে পিপিপির অধীনে ৮৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বিভিন্ন মেয়াদে পিপিপির অধীনে ৭৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ তালিকার আটটি প্রকল্প বাদে বাকি প্রায় সবই কার্যাদেশ দেওয়া, চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর পর্যায়ে রয়েছে; যা মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ৮৮টি প্রকল্প পিপিপির অধীনে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিপিপি অথরিটির সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলো শেষ করা যায়। করোনার কারণে গত বছর কাজের গতি কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এখন আমরা গতি বাড়িয়েছি। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ এ মুহূর্তে যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতের অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছে পিপিপির অধীনে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিপিপি অথরিটির অধীনে যেসব প্রকল্পের কাজ হচ্ছে তার সবই মেগা প্রকল্প। ফলে এসব প্রকল্প তো এক দিনে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এর জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। তবে সার্বিকভাবে প্রকল্পগুলোর কাজের গতি বেশ ভালো। আমরা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ আগামী জুনের মধ্যেই খুলে দেব। এতে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে আসবে।’ এ ছাড়া বাস্তবায়নাধীন মোংলা বন্দরের প্রকল্পটিও আগামী বছরের জুনেই শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার নবম অধ্যায়ের (সংস্কার ও সুশাসন) ২০২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। বর্তমানে পিপিপি কর্তৃপক্ষের আওতায় ৭৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত আছে, যার বিপরীতে  বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পিপিপির আওতায় একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং আরও ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।

 তৈরি পোশাকশিল্পের মতো অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের উৎপাদন কার্যক্রমও যাতে কাস্টমস্ বন্ডেডব্যবস্থার অধীনে আসতে পারে সে লক্ষ্যে বন্ডেড ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, যার টেন্ডার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যায় এটি বাস্তবায়ন হলে সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন ও রপ্তানিতে গতিশীলতা আসবে।

এতে আরও বলা হয়, আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) এডিপিতে ১০টি বৃহৎ প্রকল্পে মোট ৫৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা পেয়েছে। এরপর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬ হাজার ১৬২ কোটি ও প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি) ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেল ৪ হাজার ৮০০ কোটি, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ ৩ হাজার ৮২৩ কোটি এবং পদ্মা সেতু ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পেয়েছে।

আগামী অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৩৫৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য রাখা হয়েছে নতুন এডিপিতে। পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে ৮৮টি প্রকল্প। ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৬৭৭টি। এর মধ্যে পিপিপি প্রকল্প ৬১টি। ফলে মোট এডিপিভুক্ত প্রকল্পের মাত্র ৪ শতাংশ পিপিপি প্রকল্প। যদিও গত অর্থবছরের থেকে ২১টি প্রকল্প বেড়েছে। পিপিপি অথরিটির তথ্যমতে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে বহুতল ভবন নির্মাণ, ঢাকা বাইপাস সড়ক (মদনপুর-দেগ্রাম-ভুলতা-জয়দেবপুর) প্রকল্প, মোংলা ইকোনমিক জোন, লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল, পায়রা বন্দর কয়লা টার্মিনাল, শান্তিনগর-মাওয়া ফ্লাইওভার, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সেস কন্ট্রোল হাইওয়ে, বৃত্তাকার রেলপথ, পায়রা বন্দর কনটেইনার টার্মিনাল, পূর্বাচলে বহুতল ভবন, আউটার রিং রোড নির্মাণসহ ৭৯টি প্রকল্প ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। সূত্রমতে, পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প পরিবহন খাতের। এর মধ্যে অন্যতম ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, গাবতলী-নবীনগর মহাসড়ককে এক্সেস কন্ট্রোল সড়কে উন্নীত করা, ঢাকা সার্কুলার রুট, দ্বিতীয় অংশ (আবদুল্লাহপুর-ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-বাবুবাজার-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড) পর্যন্ত ৬৭ কিলোমিটার, দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করা এবং দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১৩৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পগুলো। এসব প্রকল্পের কোনোটির কাজ অবশ্য কাক্সিক্ষত হারে এগোচ্ছে না। ফলে পিপিপি নিয়ে ২০০৯ সালের শুরুতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যতটা আশার সঞ্চার হয়েছিল ১১ বছর পর ২০২১ সালে ঠিক ততটাই হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর