দেশি বিকাশমান উৎপাদনশীল শিল্প খাতের সুরক্ষায় ৯ দাবি উত্থাপন করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছে, অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করতে হবে। উৎসে আয়কর কমাতে হবে। কাটার সেকশন ড্রেজার মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও সকল প্রকার রপ্তানি খাতে ১০ শতাংশ করপোরেট কর নির্ধারণ করা হোক। কৃষিভিত্তিক হিমাগার শিল্প খাতে আয়কর কমিয়ে ১০ শতাংশ করতে হবে। ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশন ফি ও কর কমিয়ে ৭% নির্ধারণ করা হোক। পাশাপাশি বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আয়কর কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ওই চিঠি প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা, সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলমান কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে একটি বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বান্ধব স্থায়ী কর ও শুল্ক কাঠামো প্রবর্তন অত্যাবশ্যক। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাভুক্ত দেশগুলো বিশেষ তারল্য সহায়তা ব্যবস্থা চালু করেছে। তারই আলোকে শিল্প-বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য রাষ্ট্রীয় ঋণ, ক্রেডিট গ্যারান্টি, অনুদান, মজুরি সহায়তা, হিসাববিধি ও আর্থিক বিধিমালা ইত্যাদি শিথিল করা হোক। বিদ্যুৎ এবং বিভিন্ন পরিষেবা ফি কমানো, বিশেষ করে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতভিত্তিক পণ্য পরিবহন সহায়তা করা হোক। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গতিশীলতা আনতে একটি জনবান্ধব, উৎপাদনশীল এবং শুল্কবান্ধব টেকসই রাজস্ব পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে এফবিসিসিআই। এ প্রস্তাব স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসকে চিঠি দিয়েছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই পত্রে সুনির্দিষ্ট ৯ দফা দাবিনামা উত্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়- এক. অগ্রিম আয়কর বা এআইটি ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই মূল্য সংযোজন কর-মূসক বা ভ্যাট নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত অনধিক ২০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক। দুই. শিল্প পরিচালনার খরচ কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে শিল্প খাতে প্রদেয় ৩ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করতে হবে। তিন. সরবরাহ ও লেনদেনের পর্যায়ে ৩১টি বিভিন্ন হারে উৎসে আয়কর ২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হোক। চার. গত আয়কর হিসাবে নিরূপিত চূড়ান্ত টার্নওভারের ভিত্তিতে পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতার ওপর দশমিক ৫ শতাংশ হারে টার্নওভার কর আরোপ করা হোক। পাঁচ. শিল্প, সেবা ও ব্যবসায়িক খাতে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর ৩ শতাংশ টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হোক। ছয়. ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যবহৃত কাটার সেকশন ড্রেজারকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ বা মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে ১ শতাংশ শুল্কে আমদানির সুযোগ দেওয়া হোক। সাত. রপ্তানিমুখী শিল্প খাতকে আলাদা বা পার্থক্য না করে সব রপ্তানি খাতের করপোরেট করহার সমানভাবে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক। আট. বিনিয়োগ বাড়ানোর স্বার্থে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আয়করের হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হোক। নয়. কৃষিভিত্তিক হিমাগার শিল্প খাতে আয়কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক। এফবিসিসিআই আবাসন খাত প্রসঙ্গে বলেছে, ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশন ফি ও কর কমিয়ে ৭ শতাংশ হার নির্ধারণ করা হোক। এ ক্ষেত্রে গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১ দশমিক ৫ শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশ, মূসক ১ দশমিক ৫ শতাংশ সর্বমোট ৭ শতাংশ করা হোক। শিল্পটি রক্ষার প্রণোদনা হিসেবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাটহার কমানো অতীব জরুরি। জানা গেছে, ভ্যাট ও কর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতি উত্তরণে ভ্যাট, শুল্ক ও করের অসংগতি দূর করতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ত্রিপক্ষীয় টাস্কফোর্স চায় এফবিসিসিআই। অন্যথায় ব্যবসা-বাণিজ্য নীতিমালায় খাতভিত্তিক বৈষম্য ও অসংগতি থেকে যাবে। এ কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপিকে আমদানি শুল্ক, আয়কর ও মূসক আইন সরল এবং সহজ করতে টাস্কফোর্স গঠনের অনুরোধ জানিয়ে ৯ জুুন পত্র দিয়েছে এফবিসিসিআই। পত্রে বলা হয়- পণ্য ও সেবা খাতে বিদ্যমান একই ধরনের শুল্ক ও কর বৈষম্য বিলোপ করে সব খাতের জন্য সমন্বিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।