বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ফোন কলের সূত্রে অজ্ঞাত নারীর তিন খুনি শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর খিলক্ষেত ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত এক নারীর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই হত্যার শিকার সুমি হাসান নামে নারীর মোবাইলফোনে গত বছরের ১৬ জুন রাতে পাওয়া তিনটি নম্বরের কলের সূত্র ধরে তিন খুনিকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এ মামলার চার্জশিট গতকাল আদালতে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।

গ্রেফতার হওয়া তিনজনই সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পরস্পর যোগসাজশে সুমি হাসানকে শ্বাসরোধে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টা করেছিল বলে স্বীকার করেছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- ফারুকুল ইসলাম, কাজী ইমরান মাহমুদ এবং সালাউদ্দিন খলিফা ওরফে সুমন। গতকাল রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, গত বছরের ১৯ জুন ঝোপের ভিতর থেকে অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ দেখতে পেয়ে খিলক্ষেত থানা পুলিশ সিআইডি ক্রাইমসিন টিমকে সংবাদ দেয়। ক্রাইমসিন এবং ঢাকা মেট্রো উত্তর সিআইডির দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করে। ক্রাইমসিন টিম অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশের ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স সংগ্রহ করে। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা যায়, ওই নারীর নাম সুমি হাসান (৩০)। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ছিটিকিবাড়ীতে তার বাড়ি। সুমি হাসানের স্বামী ছিলেন জাহিদ হাসান। পেশায় তিনি একজন প্রাইভেট কার চালক এবং বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। জাহিদ হাসানের খোঁজ পাওয়া যায় রাজধানীর জিগাতলায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি সুমি হাসানের প্রাক্তন স্বামী। তিনি সুমি হাসানের পালক পিতা-মাতার ঠিকানা জানেন। পরে তাকে নিয়ে তার পালক মাতা আম্বিয়া খাতুনের বাড়িতে গিয়ে সুমি হাসানের ছবি দেখালে তিনি সুমি হাসানকে শনাক্ত করেন। এরপর সুমি হত্যার ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা হয়। পালক মাতা আম্বিয়া খাতুনের কাছ থেকে সুমি হাসানের মোবাইল নম্বর নিয়ে তা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সুমি জীবিত অবস্থায় সর্বশেষ অর্থাৎ গত বছরের ১৮ জুন তিনটি ফোন নম্বরে কথা বলেন। সেসব নম্বরের পর্যালোচনায় ফারুকুল ইসলাম, কাজী ইমরান মাহমুদ ও সালাউদ্দিন খলিফা ওরফে সুমনের তথ্য মেলে। এরপর ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তিনজন সুমি হাসানের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছে সুমি হাসান শারীরিক সম্পর্কের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনজনই ৩০ হাজার টাকা নাই বলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। টাকা না দিলে সুমি আসামি ফারুকের স্ত্রীকে সব বলে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপরই সুমিকে খুনের পরিকল্পনা করেন তারা। পরস্পর যোগসাজশে সুমি হাসানকে গত বছরের ১৮ জুন রাতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ গুম করতে পরদিন সকালে অপরিচিত সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে পূর্বাচল হতে ঢাকাগামী ৩০০ ফিট রাস্তার পাশের ঝোপে ফেলে যান। মামলার তদন্তকালে মৃত সুমি হাসানের ভ্যাজাইনাল সোয়াবের ডিএনএর সঙ্গে সন্দিগ্ধ আসামিদের ডিএনএর তুলনামূলক পরীক্ষায় বীর্যের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় সুমি হাসানের ভ্যাজাইনাল সোয়াব হতে যে ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায় সেখানে আসামিদের ডিএনএ পাওয়া যায়। মামলাটি তদন্ত সমাপ্ত করে তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর