রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জুলাইয়ে করোনার সর্বোচ্চ তাণ্ডব

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৯৩৬৯, মৃত্যু ২১৮

শামীম আহমেদ

জুলাইয়ে করোনার সর্বোচ্চ তাণ্ডব

পরপর দুই বছরই করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে জুলাই মাসে। টানা বিধিনিষেধের মধ্যেও গত মাসে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ তান্ডব দেখেছে দেশ। এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু, সর্বাধিক রোগী শনাক্ত ও নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হারে রেকর্ড তৈরি হয়েছে গত জুলাইয়ে। এ ছাড়া এই এক মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ১৮২ জন। প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৯৯.৪২ জন। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট মৃত্যু হয়েছিল ৬ হাজার ৯৪৪ জনের। প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ৩৮.৩৬ জন। প্রথম ছয় মাসের গড় মৃত্যুর তুলনায় জুলাইয়ে এসে মৃত্যু বেড়েছে ৫ গুণের বেশি। আর গত বছরের গড় মৃত্যুর তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে এসে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পরপর দুই বছরই জুলাই মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে করোনায়। গত বছর মার্চে দেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর ওই বছরের ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল জুলাইয়ে ১ হাজার ২৬৪ জনের। আগস্ট থেকে মৃত্যু কমতে শুরু করে। চলতি বছরেও জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশ। তবে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪.৯০ গুণ। চলতি বছরের সাত মাসে মারা গেছেন ১৩ হাজার ১২৬ জন, যার ৬ হাজার ১৮২ জনই মারা গেছেন জুলাইয়ে। এর আগে পুরো মহামারীকালে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের। এ ছাড়া গত জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১ জন, মার্চে ৬৩৮ জন, মে মাসে ১ হাজার ১৬৯ জন ও জুন মাসে ১ হাজার ৮৮৪ জনের মৃত্যু হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা সাত দিন দুই শতাধিক মৃত্যু হয়েছে দেশে, যা আগে কখনো ঘটেনি। মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৮৫ জনে, যার প্রায় ৩০ ভাগ মৃত্যুই হয়েছে গত জুলাইয়ে। এ ছাড়া গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত ২৯৯ দিনে মৃত্যু হয়েছিল ৭ হাজার ৫৫৯ জনের। দৈনিক গড় মৃত্যু ছিল ২৫.২৮ জন। সেই হিসাবে চলতি বছরের জুলাইয়ে এসে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অধিকাংশ ভাইরাস সংক্রমণ বর্ষাকালে বাড়ে। ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা বর্ষাকালে বাড়ে। তবে ডেঙ্গু মশাবাহিত, করোনা মানুষবাহিত ভাইরাস। ঈদে যেভাবে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো, মানুষ হুড়োহুড়ি করে বাড়ি ফিরল, তাতে সংক্রমণ বাড়া স্বাভাবিক। আর সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুও বাড়ে। গত রোজার ঈদের পর থেকেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছিল। ৫ এপ্রিল লকডাউন দেওয়ার পর শনাক্তের হার কমে এসেছিল। এবার যখন লকডাউনের সুফল পাওয়ার সময়, তখনই ঈদে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে ডেল্টা ভাইরাস। এ কারণে জুলাইয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এখন গার্মেন্টকর্মীরা যেভাবে আসছে, তাতে শঙ্কা আরও বেড়েছে। আগস্টে ভারতে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাংলাদেশেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এদিকে মৃত্যুর পাশাপাশি সর্বোচ্চ সংক্রমণও ছিল গত জুলাইয়ে। নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শনাক্ত হারের রেকর্ড ভাঙে গত ২২ জুলাই। ওইদিন প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩২.১৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২৪ জুলাই আগের রেকর্ড ভেঙে ৩২.৫৫ শতাংশ নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অথচ, জুনের শুরুতেও ১০ শতাংশের নিচে ছিল শনাক্তের হার। অন্যদিকে ২৮ জুলাই এক দিনেই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। এক দিনে সর্বোচ্চ ২৫৮ জনের মৃত্যুর রেকর্ডও তৈরি হয় গত ২৭ জুলাই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ হাজার ৩৬৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩০.২৪ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৬৮৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ১৩৪ জন ছিলেন পুরুষ ও ৮৪ জন নারী। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৬৭.৭০ শতাংশই পুরুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২০৫ জনের ও বাড়িতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, খুলনা বিভাগে ২৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ২২ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন ও সিলেট বিভাগে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১২০ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ৩৭ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ৩৭ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ১৭ জন ত্রিশোর্ধ্ব, ছয়জন বিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ১১ বছরের কম।

সর্বশেষ খবর