শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হাতুড়ির শব্দে মুখর নৌকার গ্রাম

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

হাতুড়ির শব্দে মুখর নৌকার গ্রাম

চাঁপাতলী কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার একটি গ্রাম। গ্রামটিতে তিন শতাধিক পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে রয়েছে জেলে, শীল, বাদ্য বাজানোতে জড়িত নট্ট, নৌকার কারিগর, কামার ও ধোপা। এত বিচিত্র পেশার মানুষের বাস হলেও বেশির ভাগ সময় নৌকার কাজ চলে। গ্রামটির বাতাসে প্রায় সারা বছরই কাঠ-পেরেকে হাতুড়িপেটার শব্দ ভাসে। এই গ্রামের নৌকায় পানিতে ভাসেন আশপাশের গ্রামের মানুষ। তাই গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘নৌকাগ্রাম’ হিসেবে।

এ উপজেলায় গোমতী, তিতাস, কালাডুমুর, খিরাই, ধনাগোদা ও কাঁঠালিয়া নদীসহ বিভিন্ন খাল রয়েছে। রয়েছে বিল ও জলাশয়। এ ছাড়া  এলাকায় শতাধিক মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। মাছের খাবার দিতে, পরিবহনে ও ধরতে নৌকার চাহিদা রয়েছে। চাঁপাতলী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সারা বছর নৌকা তৈরি হলেও বর্ষা  মৌসুমে এ গ্রামে শুরু হয় নৌকা তৈরির উৎসব। প্রতিটি বাড়িতে রাত গভীরেও হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শোনা যায়। কারিগরদের বাড়ির উঠানে নৌকা তৈরির কাজ করা হয়। ওই উঠান থেকেই নৌকা বিক্রি হয়। কারিগররা জানান, একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে তিনজন লোকের এক দিন লাগে। নৌকা তৈরিতে রেইনট্রি গাছের কাঠ এবং লোহার সামগ্রী প্রয়োজন হয়। কারিগররা উপজেলার গৌরীপুর বাজার থেকে কাঠ সংগ্রহ করেন। নৌকার কারিগর সুনীল চন্দ্র সরকার ও নিতাই দত্ত বলেন, নৌকা তৈরির কাজে জড়িত এখন ২০টি পরিবার। আগে আরও বেশি পরিবার জড়িত ছিল। নদী-খাল কমে যাওয়ায় নৌকার চাহিদা কমে গেছে। এ ছাড়া করোনার কারণে পরিবহন বন্ধ। বিভিন্ন জেলার কাস্টমার আসতে পারেন না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব পরিবারের পুরুষরা নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটান। তারা জানান, ডিগলা, কোষা, পাতাইল্লা কোষাসহ হরেক নামের নৌকা আছে। এগুলো বানাতে খরচ হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এতে চার-পাঁচজন যাত্রী উঠতে পারেন। বিক্রি হয় সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়। পরিচর্যা করলে তিন মৌসুম চালানো যায়। তবে শীলকড়ই দিয়ে ভালো নৌকা তৈরি হয়। দাম বেশি। প্রতিটি ১০-১২ হাজার টাকা। ৬-৭ বছর চালানো যায়। লাভের টাকায় কারিগররা বছরের চার মাস সংসার চালাতে পারেন। বাকি সময় তারা কাঠের আসবাব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। পাশের বাঁশরা গ্রামের বাসিন্দা মৎস্য ব্যবসায়ী আলী আহমেদ মিয়াজী বলেন, চাঁপাতলী গ্রাম নৌকা তৈরির জন্য বিখ্যাত। আমাদের মাছের প্রজেক্টের জন্য ওই গ্রামের কারিগর দিয়ে নৌকা তৈরি করি। স্থানীয় কৃষি সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, চাঁপাতলী গ্রামে তৈরি করা নৌকা বিভিন্ন স্থানের লোকজন কিনে নিয়ে যান। এখানকার লোকজন শত বছরের বেশি সময় ধরে নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মালিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামের লোকজন শত বছরের বেশি সময় ধরে নৌকা তৈরি করছেন। গ্রামের শতাধিক মানুষ এ পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর