শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এক মামলায় ছয় কর্মকর্তা

মির্জা মেহেদী তমাল

এক মামলায় ছয় কর্মকর্তা

পাঁচ বছর পর ফরিদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এই সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে ছয়বার। গাজীপুরের এ খুনের ঘটনায় অংশ নিয়েছিল নিহতের পরিচিতরাই। এ ঘটনায়  গ্রেফতারকৃত মাহবুব আল হাসান জিয়া ও সাহিদ ওরফে সাইদ ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। ইয়াবা সেবনে বাধা দেওয়ার কারণে ফরিদকে খুন করা হয়েছিল বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। আর ব্যবহৃত অস্ত্রটিই হলো হত্যাকান্ডের মূল আলামত। ১৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের জয়দেবপুরের ভাওয়াল এলাকার বদরে আলমের বাড়ির সামনে ফরিদকে গুলি করা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গাজীপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রায় এক মাস পর ওই বছরের ১১ নভেম্বর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের মা ফুলমতি বেগম বাদী হয়ে ১৭ মার্চ অজ্ঞাতদের আসামি করে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। ঘটনাটি ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির। ২০১৫ সালের ১০ মে পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত করেন জয়দেবপুর থানার এসআই মনির হোসেন।  

তিনি মামলাটির কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি। ওই বছরের ২২ মে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় একই থানার এসআই আবদুল জলিলকে। ১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি তদন্ত কাজ চালান। তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই সিরাজ উদ দৌলাকে। তিনি ২০১৬ সালের ৯ মে পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালান। তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এর পরদিন থেকে ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন একই থানার এসআই মাহবুব হাসান। তদন্তকালে তিনি সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে জয়দেবপুরের চান্দনা গ্রামের ফরহাদ হোসেন কবির (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেন। কিন্তু কবিরের কাছ থেকে কোনো ধরনের তথ্য না পাওয়ায় মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই আরশেদ মিয়াকে। তিনি ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তদন্ত চালালেও হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু বের করতে পারেননি। সবশেষে ২০১৮ সালে পুলিশ সদর দফতরের হস্তক্ষেপে মামলাটি সিআইডিতে ন্যস্ত করা হয়। সিআইডি জানায়, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর একাধিক সোর্স নিয়োগ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুরের যুগীতলা এলাকার রাস্তায় নিজের গাড়িতে বসে ইয়াবা সেবন করছিল জিয়া। তার সঙ্গে গাড়িতে ছিল গাজীপুরের চান্দনা এলাকার ফরহাদ হোসেন কবির। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ফরিদ সেখানে গিয়ে হঠাৎ টান দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ফেলে। জিয়াকে ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় দেখে ফরিদ গালিগালাজ করে। এ নিয়ে জিয়া এবং ফরিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় স্থানীয় হোসেন আলীর ছোট ভাই শরীফ এবং ফরহাদের বন্ধু ইউসুফ ঘটনাটি মীমাংসা করেন। পরে ফরিদকে চরম শায়েস্তা করতে সাইদকে নির্দেশ দেয় জিয়া। প্রয়োজনে তাকে শেষ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়। এরপর তারা তিনজন একসঙ্গে গাড়িতে উঠে চান্না প্রাইমারি স্কুলের কাছে যায়। চা খাওয়ার পর সাইদকে সেখানে রেখে জিয়া এবং ফরহাদ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।

পুলিশ  জানতে পারে, হত্যাকান্ডের পর গুলিবর্ষণকারী সাইদ ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। সে একটি গার্মেন্ট কারখানায় গাড়ি চালায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় খোঁজ নেয় সিআইডি। গেটে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে সাইদের ব্যাপারে তথ্য জানতে চায়। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারে না। পরে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় গিয়ে গাড়ির ল্যাইনম্যানদের কাছে তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। একজন লাইনম্যান জানায়, তিনি সাইদের বাড়ি চেনেন। বাড়ি কোনাবাড়ি এলাকায়। ওই লাইনম্যানের সহায়তায় সাইদের বাড়ি গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে দেখা হয়। তার মা জানান, সাইদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। সে বাড়িতে আসে না। পরে সোর্সের সহায়তায় জানতে পারি, সাইদ সেখানে গাড়ি রাখেন সেখানেই থাকেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি সাইদকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সাইদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নলজানি ওয়্যারলেস গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩১ জানুয়ারি জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।’ আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জিয়া এবং সাইদ জানায়, জিয়া এবং ফরহাদ গাজীপুর ত্যাগ করার পর সাইদ তার বন্ধু জাহিদকে ফোন করে একটি পিস্তল নিয়ে জয়দেবপুরের সার্ডি রোডে আসতে বলে। ওইদিন রাত ৮টার দিকে জাহিদ পিস্তল নিয়ে সাইদের সঙ্গে দেখা করে। পরে ওই পিস্তল দিয়ে সাইদ ফরিদকে রাস্তায় পেছন দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর পিস্তলটি জাহিদকে ফেরত দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে জিয়াকে ফোন করে সাইদ জানায়, ফরিদকে গুলি করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর