শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
সুন্দরবন দস্যু মুক্তির তিন বছর পূর্তি

আর কাউকে দস্যুবৃত্তি করতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

আর কাউকে দস্যুবৃত্তি করতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সুন্দরবন দস্যু মুক্তির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠান গতকাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সুন্দরবন এখন বনদস্যু মুক্ত। সেই সুন্দরবনে নতুন করে কাউকে দস্যুবৃত্তি করতে দেওয়া হবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। নতুন করে কেউ যদি কোনো অপতৎপরতা করতে যান, শেষ রক্ষা হবে না। গতকাল বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে সুন্দরবনকে দস্যু মুক্তির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদিদোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিনচালিত  নৌকা এবং ২২৮টি গবাদি পশু (বাছুরসহ) উপহার তুলে দেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি প্রমুখ।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় খোঁজখবর রাখছেন- সুন্দরবনে দস্যুতা ছেড়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা এখন কেমন আছেন। তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন। আপনাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দাবি ছিল মামলা প্রত্যাহারের। ধর্ষণ ও খুনের মামলা ছাড়া অবশ্যই পর্যায়ক্রমে সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে। সরকারি অনুদানে যাতে মামলা লড়তে উকিল খরচ না হয় সে জন্যই এই ব্যবস্থা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে সুন্দরবনের ৬টি বনদস্যু বাহিনী অস্ত্র তুলে আত্মসমর্পণ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে ওই দিন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। ফলে ৪০ বছর ধরে দাপিয়ে বেড়ানো সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়। এখন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল, জেলে-বনজীবীসহ পর্যটকদের মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইছে।

২০১২ সালে সুন্দরবনের দস্যুতা বন্ধে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-কে দিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। সেই সময়ে বিশেষ করে র‌্যাব বরিশাল-৮ এর অভিযানে সুন্দরবনের জলদস্যু ও বনদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১৩৮ জন জলদস্যু বা বনদস্যু নিহত হয় ‘বন্দুকযুদ্ধে’। র‌্যাবের অভিযানে ফেরারি জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় তারা। এক পর্যায়ে দীর্ঘদিন সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো দন্ডমুন্ডের কর্তা বনদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে প্রথমে র‌্যাবের আহ্‌বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণে এগিয়ে আসে মাস্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার। ২০১৫ সালের ৩১ মে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে মাস্টার ও তার ৯ সদস্য আত্মসমর্পণ করে।

এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মজনু বাহিনীর ৯ দস্যু, মজিদ বাহিনীর ৯ জন, বড় ভাই বাহিনীর ৮ জন, দাদা ভাই বাহিনীর ১৫ জন, সুমন বাহিনীর ১২ জন, হান্নান বাহিনীর ৯ জন, আমির আলী বাহিনীর ৭ জন, মুন্না বাহিনীর ৭ জন, ছোট শামছু বাহিনীর ৯ জন, সূর্য বাহিনীর ১০ জন, ছোট সুমন বাহিনীর ৮ জন, ডন বাহিনীর ১০ জন, মানজু বাহিনীর ১১ জন, আলিফ ও কবিরাজ বাহিনীর ২৫ জন, ছোট রাজু বাহিনীর ১৫ জন, জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০ জন, নোয়া বাহিনীর ১২ জন, খোকাবাবু বাহিনীর ১২ জন, আকাশ ও সাগর বাহিনীর ১৩ জন, শান্ত বাহিনীর ১৪ জন, ইলিয়াস বাহিনীর ২ জন বনদস্যু এবং সর্বশেষ ২০২৮ সালের ১ নভেম্বর একসঙ্গে আনোয়ারুল বাহিনীর ৮ জন, তৈয়বুর বাহিনীর ৫ জন, আলামিন বাহিনীর ৫ জন সত্তার বাহিনীর ১২ জন, শরিফ বাহিনীর ১৭ জন ও সিদ্দিক বাহিনীর ৭ জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আনুষ্ঠনিক আত্মসমর্পণ করেন।

২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন উপকূল দাপিয়ে বেড়ানো ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু বা বনদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩৩ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গুলি র‌্যাবের হাতে তুলে দেয়।

সর্বশেষ খবর