মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

অস্থির পাখি গাংচিল

আলম শাইন

অস্থির পাখি গাংচিল

প্রজাতির বাংলা নাম ‘গাংচিল’। ইংরেজি নাম ‘হুইস্কার্ড টার্ন (Whiskered Tern)’। বৈজ্ঞানিক নাম, Chlidonias hybridus।  আমাদের দেশে কয়েক প্রজাতির গাংচিল দেখা যায়। এটি স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও কাশ্মীর, উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকা, আসাম, শীলঙ্কা ও নেপালের নিম্নভূমিতে এ পাখি বিচরণ করে। প্রচন্ড শীতে এরা সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। আবার পরিযায়ী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বেলুচিস্তান, পেশোয়ার, সিন্ধু প্রদেশ অবধিও।

স্থানীয় প্রজাতির হওয়ায় দেশের নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় কিংবা সমুদ্র উপকূলে এদের বছরের যে কোনো সময়ে দেখা মেলে। এক সময় দেশে এদের অবাধ বিচরণ ছিল; হালে এদের সংখ্যা খানিকটা হ্রাস পেয়েছে। তথাপিও শীতে নদী পথের যাত্রীদের দেখার সুযোগ মেলে। বিশেষ করে এরা লঞ্চ-স্টিমারের পেছন ‘ক্রিয়াক ক্রিয়াক’ কর্কশ কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওড়াউড়ি করতে দেখা যায়। অবশ্য জলযানের পেছনে ওড়াউড়ির একটা কারণও আছে।

বিশেষ করে লঞ্চ বা স্টিমারের প্রপেলারের প্রচন্ড ঘূর্ণিতে আঘাত পেয়ে ছোট ছোট মাছ আহত অথবা নিহত হলে এরা সেগুলো খাবার সুযোগ পায়। এরা চঞ্চল প্রকৃতির পাখি, স্থিরতা নেই বললেই চলে। দিনের বেশির ভাগই প্রজাতিটি নদ-নদীর ওপর উড়ে বেড়ায়। এরা একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে। বিশ্রাম নেয় জলে পুঁতে রাখা কঞ্চি বা বাঁশে ওপর। ঠিক তখনই ওদের খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব, অবশ্য যদি সঙ্গে বাইনোকুলার থাকে। অন্যথায় উড়ন্ত অবস্থায় শারীরিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়। গাংচিল লম্বায় ২৫-২৭ সেন্টিমিটার। স্লিম গড়ন। গলা ধবধবে সাদা। ঘাড়ে বন্ধনী দেখা যায়। প্রজননের সময় মাথা ও ঘাড় কালো। পিঠ গাঢ় ধূসর। কপাল, গলা সাদা। নিচের দিকে কালো। এ সময় ঠোঁট লাল দেখায়। পা-পায়ের আঙুল গাঢ় লাল। প্রজননের বাইরে পিঠের দিক ধূসরাভ। নিচের দিক সাদাটে। মাথায় কালো ছিট। শুধু মাথার চান্দিই নয় ঠোঁটের বর্ণ পাল্টিয়ে কালচে রূপ ধারণ করে প্রজননের পরবর্তীতে। তবে স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। এদের প্রধান খাবার মাছ। এ ছাড়াও ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় খায়। প্রজনন মৌসুম সময় জুন থেকে আগস্ট। অঞ্চল বা দেশভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের ঘটে। বাসা বাঁধে নদী বা জলাশয়ের জলজ গুল্মের ওপর। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর