মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লেনদেন নয় পরকীয়ার জের

মির্জা মেহেদী তমাল

লেনদেন নয় পরকীয়ার জের

পাঁচ বছর আগে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরবাজারে খুন হন শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। থানা পুলিশের পর সে মামলা তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কিন্তু কোনো আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি তারা। একপর্যায়ে এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দিয়ে দেয়। আর হত্যার মোটিভ হিসেবে উল্লেখ করে আর্থিক লেনদেন। বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে সে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। ঘটনার তিন বছর পর সেই হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে তারা। স্ত্রীর ‘পরকীয়া’র জেরে ঠান্ডু নামে এক ব্যক্তি তার ভাগনে হায়াতকে সঙ্গে নিয়ে শহিদকে হত্যা করেন। পিবিআই হায়াতকে গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বলেছেন, মামা ঠান্ডুর পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে মামি সালমার সঙ্গে প্রেমের জেরে পরিকল্পিতভাবে শহিদকে হত্যা করেন তারা। পিবিআই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আর্থিক লেনদেনের বদলে ‘পরকীয়া’র জেরে হত্যাটি ঘটেছিল বলে জানতে পারে। অভিযান চালিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে হায়াত আলী নামে এক যুবককে গ্রেফতারের পর তিনি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বর্ণনা দেন ও কারণ জানান। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে করমজা বাজার এলাকায় শহিদকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শহিদের ভাই পাহাড়ি রাজু সাঁথিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায়ও বিদেশে লোক পাঠানোর নামে আর্থিক লেনদেনের কারণে শহিদকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। থানা পুলিশের পর মামলাটির তদন্তভার পাবনা জেলা সিআইডিতে হস্তান্তর হয়। সিআইডি হত্যাকারীদের ধরতে ব্যর্থ হয়ে মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি সালমা, বেগম আক্তার ও ইসমাইলকে অব্যাহতি দিয়ে এবং অন্য দুই আসামি ঠান্ডু ও হায়াতকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়। শহিদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ধুবাউড়ার চারুয়াপাড়া বাজার এলাকায়। একই এলাকায় ঠান্ডু মোল্লার শ্বশুরবাড়ি। ঠান্ডু ওমানে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী সালমা খাতুনের সঙ্গে শহিদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছুটিতে দেশে ফিরে জানতে পেরে ভাগনে হায়াতকে নিয়ে তিনি শহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঠান্ডু পরিকল্পনা অনুযায়ী সালমাকে দিয়ে ঘটনার দিন শহিদকে ময়মনসিংহ থেকে পাবনার বেড়া সিঅ্যান্ডবি স্ট্যান্ডে যেতে বলেন। ঠান্ডু ও হায়াত আগে থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান নেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সালমার কথামতো শহিদ ময়মনসিংহ থেকে বাসযোগে পাবনা সিঅ্যান্ডবি স্ট্যান্ডে পৌঁছান। এরপর সালমা কৌশলে শহিদকে করমজা বাজারের কাছে নিয়ে গেলে সন্ধ্যার পর তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যান ঠান্ডু ও হায়াত। গ্রেফতার হায়াত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, পরিকল্পনামতো সালমা ও শহিদ সাক্ষাৎ করে একে অন্যের হাত ধরে একসঙ্গে হাঁটতে থাকেন। খানিক পর অন্ধকার নামলে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে তারা পেছন থেকে শহিদকে জাপটে ধরেন। ঠান্ডু ধারালো অস্ত্র দিয়ে শহিদের বুকে ও পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত করেন। শহিদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ঘটনার পরপরই শহিদকে লোকজন প্রথমে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক দিন পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই আসামি ঠান্ডু আবার ওমান চলে যান। সালমা ও হায়াতও আত্মগোপনে চলে যান। মামলাটির তদন্ত চলাকালে অর্থ লেনদেনের কারণে ঠান্ডু তাকে হত্যা করেছেন উল্লেখ করে ঠান্ডু ও হায়াতের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। মামলা থেকে অন্য দুজনসহ সালমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর