রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি

রাজধানী থেকে গ্রাম

শফিউল আলম দোলন

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। এবার প্রথমে জেলা পর্যায়ে, পরে পর্যায়ক্রমে উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে থাকবে সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশন ও লিফলেট বিতরণ। রাজধানীর বাইরে কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশগুলোতে তারা অংশ নিয়েছেন। দেশব্যাপী এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোটাই প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর রাজধানী ঢাকা অভিমুখে কর্মসূচির পরিকল্পনা নিচ্ছে দলটি। বিশেষ করে বিভাগীয় পর্যায়ে লংমার্চ কর্মসূচির পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র আদলে ঢাকা অভিমুখে নেওয়া হতে পারে ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি। একই সঙ্গে বেগম খালেদা  জিয়াকে সুচিকিৎসার্থে বিদেশ পাঠানোর অনুমতির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথও খোলা রাখা হবে। এমন তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের একাধিক সদস্য। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশনের মতো গতানুগতিক কর্মসূচি ছাড়াও অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করা যায় কি না সে ব্যাপারেও প্রস্তাব করেছেন প্রায় অর্ধেক সদস্য। সেগুলোও ভেবে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের  নেতাদের মতামত নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির একটি খসড়া তৈরি করা হয়। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এ খসড়া কর্মসূচি থেকে আরও সংযোজন-বিয়োজন করার পর তা চূড়ান্ত করা হবে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের দাবি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর জীবন বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। সরকার যদি এ দাবি না মানে তবে এ জন্য যা যা করা দরকার এর সবকিছুই করা হবে। যেসব কর্মসূচি দেওয়া দরকার, তার সবই দেওয়া হবে।’ এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের টানা আট দিনের কর্মসূচি ছাত্রদলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ইতিবাচক কোনো সাড়া না পাওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাদের চাপ রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর। তাদের ধারণা, এ ধরনের ছোটখাটো নরম কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজি করানো যাবে না। কিন্তু দলের হাইকমান্ডের ইচ্ছা পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচির দিকে এগিয়ে যাওয়া। জানা গেছে, দলীয় হাইকমান্ডের ইচ্ছাতেই মূলত ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে কর্মসূচি জোরালো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। এভাবেই দাবি মানাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে জনমত গঠনের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেটি নির্ভর করবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। একই সঙ্গে কোনো ধরনের হঠকারী কর্মকা  না নিতে বা কারও ফাঁদে পা না দিতেও নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ প্রদানের দাবি আমাদের। এটি একজন নাগরিকের সাধারণ অধিকার। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী সবাই চাইছেন দেশনেত্রীকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তাঁর পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এভাবে চললে বেশি দিন বাঁচবেন না তিনি। লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও জার্মানি ছাড়া বাংলাদেশে সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে না। তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আমাদের কর্মসূচি চলছে। এ জন্য যা যা করা দরকার আমরা তার সবই করব।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা হাইকমান্ডের কাছে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার দাবি করেছি। কঠোর আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবি আদায় করা সম্ভব নয়।’

সর্বশেষ খবর