শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

উপজেলা পরিষদের কর্মচারী বদলির ক্ষমতা চান ডিসিরা

ডিসি সম্মেলন শুরু ১৮ জানুয়ারি, ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

উবায়দুল্লাহ বাদল

এবার উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। প্রতি তিন বছর অন্তর জেলা পর্যায়ে আন্ত-উপজেলায় বদলির ক্ষমতা ডিসিকে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে আন্তজেলা পর্যায়ে বদলির ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারে হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছেন ঝালকাঠির ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে, এই কর্মচারীরা দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে চাকরির কারণে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ফলে অফিসের কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এতে প্রত্যাশিত সেবা বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে। বর্তমানে তাদের বদলির কোনো বিধান নেই।

একইভাবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বৃদ্ধি করতে স্থানীয় সব ধরনের ইজারা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন সিলেটের ডিসি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, নিজস্ব আয় কম হওয়ায় অনেক উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর ও গ্রামপুলিশদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এমনকি চেয়ারম্যান ও সদস্যদেরও সম্মানী ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। উল্লিখিত প্রস্তাবসহ এ ধরনের কমবেশি পৌনে তিন শ প্রস্তাব সুপারিশ আকারে পাঠিয়েছেন ডিসিরা। কেন্দ্রীয় সরকারের মাঠ প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে এসব সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে, যা আসন্ন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আগামী ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তারা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে অংশগ্রহণ করবেন। এদিন সন্ধ্যায় ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য (ভার্চুয়ালি) দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। গতকাল এ সম্মেলনের বিস্তারিত কর্মসূচি প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে ২১টি কার্য অধিবেশনসহ মোট ২৫টি অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে প্রথম দিন সাতটি, দ্বিতীয় দিন আটটি ও তৃতীয় দিন ১০টি অধিবেশন থাকবে। সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার মাধ্যম ডিসি সম্মেলন। প্রতি বছর জুলাইয়ে এর আয়োজন করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দুই বছর হয়নি। জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। প্রতি বছর সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং বাকি কর্ম অধিবেশন সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হতো। প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছ থেকে সারা দেশের মাঠের সমস্যাগুলো শুনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতেন। একে মুক্ত আলোচনা বলা হতো। রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও ডিসিরা সরাসরি দেখা করার সুযোগ পেতেন। করোনা মহামারির কারণে এবার প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। ফলে এবারের ডিসি সম্মেলনে সে সুযোগ নাও থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষের বদলে এবার কার্য অধিবেশন হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকেন। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবেও প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পান ডিসিরা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ থেকে ১৮ জুলাই ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেবারই প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা বৈঠক করেন। চলতি বছরের ৫ থেকে ৭ জানুয়ারি এবং পরে ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি এ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে স্থানীয় সরকার বিভাগের মোট ১১টি প্রস্তাব বা সুপারিশ পাঠিয়েছেন ডিসিরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গ্রাম আদালতের বেঞ্চ সহকারী/জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন কুষ্টিয়ার ডিসি; ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন যশোরের ডিসি; গ্রাম পুলিশ ও মহল্লাদারদের বেতন-ভাতা ও আনুতোষিক ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রাম, যশোর, বান্দরবান ও বরগুনার ডিসিরা। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে ব্যয়বহুল এলাকা ঘোষণার প্রস্তাব করেছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত মোট পাঁচটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ডিসিরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে মাঠকর্মীর পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ সম্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছেন ভোলার ডিসি।

সর্বশেষ খবর