বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
বিবিএসের প্রতিবেদন

বাড়ছে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি

মানিক মুনতাসির

মা থেকে শিশুর শরীরে মরণব্যাধি এইডসের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে- এ বিষয়ে অবগত নন দেশের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। তবে এইডসের অন্তত একটি বাহক সম্পর্কে অবগত আছেন ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এবং বর্তমানে সবগুলো বাহক সম্পর্কে অবগত আছেন ৩৬ শতাংশ মহিলা। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে এই হার ছিল ২৯ শতাংশ। এতে সচেতনতার হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। যা ৮-১০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। এই সূচকে কাক্সিক্ষত হারে প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় নারীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির প্রকাশিত রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০ এ এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আক্রান্তের পরিসংখ্যানেও কিছুটা গোলমাল রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউনিএইডস। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এইডস চিহ্নিত ১৫-৪৯ বছর বয়সীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয় ২০১৩ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৪ হাজারেরও বেশি এইডস রোগী রয়েছেন। এদের মধ্য থেকে চিকিৎসার আওতায় এসেছেন ৮৪ শতাংশ রোগী। বাকিরা এখনো চিকিৎসার বাইরে রয়েছেন। শতভাগ রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনতে না পারায় ভবিষ্যতে আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.১ শতাংশ এইডসে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত (২০২০) বছরে বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের। আর এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে মোট ১ হাজার ৫৮৮ জনের।

সংস্থাটির ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এইডস হয়েছে কি না, সে বিষয়ে সচেতনতার হার ছিল ৫২ শতাংশ, যা ২০২১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ শতাংশে। দুই বছর আগে যেভাবে চিকিৎসা সেবার আওতায় থাকা রোগীদের সংখ্যা ছিল ৬৫ শতাংশ, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৭৭ শতাংশে। তবে এই হার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের তুলনায় কম। কেননা জাতিসংঘের চাহিদা অনুযায়ী, এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়ে আসার জন্য লক্ষ্য হচ্ছে অন্তত ৯৫ শতাংশে নিয়ে আসা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। যার ফলে এখানে এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। প্রথম যিনি শনাক্ত হয়েছিলেন, তিনি এখনো সুস্থ সবলভাবে বেঁচে রয়েছেন। তিনি নিয়মিতভাবে এইচআইভি চিকিৎসা কর্মসূচির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ। বিশ্বব্যাপী আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভাবনের ফলে এইডসে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। এখন সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এইডস আক্রান্ত হলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৬১ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের। তবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ হাজার ১০৪ জনকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা গেছে। বাকি ১ হাজার ১২৫ সংক্রমিত ব্যক্তি এখনো চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭৭ লাখ। গত বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং ১৫ লাখ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) চিকিৎসা পেয়েছে। তবে আশার দিক হচ্ছে করোনা মহামারির কারণে দেশে গত দুই বছর এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগের সংখ্যা কমে এসেছে। ২০১৬ সালে ৫৭৮ জন রোগী শনাক্তের পর ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৮৬৫ জনে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে ৮৬৯ জন হয় এবং ২০১৯ সালে ৯১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু গত ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে দেশে করোনা মহামারি প্রতিরোধে লকডাউনসহ বিধিনিষেধের ফলে শনাক্ত প্রচেষ্টায় ছেদ পড়ে। ফলে আগের বছরের চেয়ে ২০২০ সালে নতুন শনাক্ত কমে ৬৫৮ জনে নেমে আসে।

সর্বশেষ খবর