আগামী ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রাইম ব্যাংকের ইউকে রেমিট্যান্স হাউস পিবিএল এক্সচেঞ্জ ইউকে লিমিটেডের তিন শহরের তিন শাখা। এ-সংক্রান্ত একটি নোটিস তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। যেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছর ৩০ মের (আজ) পর প্রতিষ্ঠানটি আর কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করবে না।
এ বিষয়ে পিবিএল এক্সচেঞ্জ ইউকে লিমিটেডের বর্তমান সিইওকে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সটে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। ১০ বছরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করলেও অলাভজনক হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, শুরুর কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করলেও ২০২১ ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স হাউসটি বিপাকে পড়ে, যখন ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংক তাদের মানি ট্রান্সফারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। মূলত লেনদেনে স্বচ্ছতা অথবা সন্দেহজনক ট্রানজেকশন থাকলে রেমিট্যান্স হাউসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই কারণে ব্রার্কলেস, লয়েডস, এইচএসবিসি ব্যাংকের মতো হাই স্ট্রিট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি অনেকগুলো রেমিট্যান্স হাউস নিজে ব্যবসা পরিচালনা করার সক্ষমতা হারিয়ে বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার কোম্পানি, যেমন স্মল ওয়ার্ল্ড, রিয়া, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের হিসাবে বাংলাদেশ একসময় ব্রিটেনের ব্যাংকের জন্য হাই রিস্ক ক্যাটাগরিতে ছিল। যদিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন উন্নত হয়েছে এই আর্থিক সংস্থার হিসাবে। প্রাইম ব্যাংক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ক্ষেত্রেও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হারিয়ে তা-ই হয়েছিল। ন্যাটওয়েস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হারিয়ে তারা স্মল ওয়ার্ল্ডের থার্ডপার্টি হয়ে যায়। ক্লিয়ার নামে একটি অনলাইন ব্যাংকের মাধ্যমে শুধু অনলাইন ট্রানজেকশন করতে পারত নিজস্ব ব্যাংকের অধীনে। কিন্তু ক্যাশ গ্রাহকদের জন্য তারা থার্ডপার্টি অ্যাকাউন্ট স্মল ওয়ার্ল্ড ব্যবহার করত। স্মল ওয়ার্ল্ড থেকে প্রাপ্ত কমিশনে প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ করতে পারছিল না। সেই সঙ্গে লন্ডন, বার্মিংহাম, ওল্ডহামে তিনটি শহরের প্রাইম লোকেশনে অফিস, স্টাফ স্যালারি সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির মধ্যে পড়ে।
পিবিএল এক্সচেঞ্জ ইউকে লিমিটেডের প্রথম দিকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্রিটেনে বাংলাদেশের ব্যাংকের যেসব এক্সচেঞ্জ হাউস এসেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ছিল পিবিএল এক্সচেঞ্জ। অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আরও ৬/৭ বছর আগেই বন্ধ হলেও পিবিএল এক্সচেঞ্জের অ্যাকাউন্ট ছিল সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে। সেটিকে ধরে রাখার অনেক সুযোগ তাদের ছিল।
সর্বশেষ ছয় মাস আগে পিবিএল এক্সচেঞ্জ লিমিটেড তাদের খরচ কমাতে তিন ব্রাঞ্চের তিন ম্যানেজারের পদ বাতিল করে শুধু একজন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার পদ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। এতেও কুলাতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কোনো ধরনের আইন ভঙ্গ করেনি। তাদের ২০২১ সালের ইন্টারনাল অডিটে (প্রাইম ব্যাংকের অডিট) লন্ডন অফিসে ১৮০ হাজার পাউন্ডের ঘাপলা পাওয়া যায়। এ ঘাপলা মূলত বিভিন্ন সাব-এজেন্টের ক্রেডিটের কারণে তৈরি হয়। মূলত হিসাবের অদক্ষতার জন্যই এ ঘাপলা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত ৪০-৫০ হাজার পাউন্ড এজেন্টদের কাছ থেকে তোলা গেলেও ১৩০ হাজারের মতো টাকা আর উঠে আসেনি। প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী জানান, এই টাকার গরমিল হয়েছে এজেন্টদের ঠিকমতো মনিটর না করার জন্য। দায়িত্বের এই অবহেলাসহ অব্যাহত লোকসানের জন্য ব্রিটেনের সিইও ও বাংলাদেশের দুজন এমডি, যারা মূলত এই রেমিট্যান্স শাখার দায়িত্বে ছিলেন, ২০২১ সালের নভেম্বরে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। লন্ডন ব্রাঞ্চ ক্ষতির সম্মুখীন থাকলেও বার্মিংহাম ব্রাঞ্চ লাভজনক ছিল। কিন্তু এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশ অনেক নিয়মিত গ্রহাক। আদিল রহমান নামের একজন বলছিলেন, ‘আট বছর ধরে এখানে টাকা পাঠাই, কখনো আইডি নিয়ে প্রতারণার শিকার হইনি।’