সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকায় ফিরছে মানুষ, যানজট

সড়কে যাত্রীদের স্রোত চাপ কম নৌ ও রেলে

প্রতিদিন ডেস্ক

সড়কে যাত্রীদের স্রোত চাপ কম নৌ ও রেলে

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গতকাল তীব্র যানজট - রোহেত রাজীব

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ভোগান্তির মধ্যেই কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। ঈদের অষ্টম দিনে গতকাল বরিশাল থেকে নৌপথে ঢাকাগামী মানুষের চাপ কিছুটা কমলেও পদ্মা সেতু হয়ে সড়কপথে স্রোত অব্যাহত রয়েছে। লঞ্চের সীমিত কেবিন টিকিট না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে ডেকে ঢালাও বিছানায় ঢাকায় এসেছেন। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল : ঈদের অষ্টম দিনে নৌপথে ঢাকাগামী চাপ কিছুটা কমলেও পদ্মা সেতু হয়ে সড়কপথে এখনো স্রোত অব্যাহত রয়েছে। লঞ্চের সীমিত কেবিন টিকিট না পেয়ে ঢালাও বিছানায় ঢাকা যাচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী। ঈদের পর ১৫ ও ১৬ জুলাই নিয়মিত সার্ভিসের  পাশাপাশি দ্বিগুণ স্পেশাল সার্ভিস চলে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে। গতকাল ঢাকার সদরঘাটে প্রতিটি লঞ্চ থেকে নামেন দেড় থেকে ২ হাজারের অধিক যাত্রী। পারাবত কোম্পানির একটি লঞ্চ থেকে গতকাল সকালে ২ হাজারের বেশি যাত্রী নেমেছে সদরঘাটে। এ ছাড়া সুন্দরবন কোম্পানির একটি লঞ্চ থেকে নামেন ১ হাজার ৭০০ যাত্রী। তবে গতকাল বিকালে বরিশাল নদীবন্দরে ভিড় ছিল না আগের দুই দিনের মতো। ১৫ জুলাই বরিশাল নদীবন্দর থেকে ১৪টি এবং ১৬ জুলাই ১৬টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও ঢাকা যাওয়ার জন্য ঘাটে অপেক্ষায় ছিল ৮টি লঞ্চ। সব লঞ্চ যাত্রীতে ছিল পরিপূর্ণ। সব লঞ্চের কেবিন বিক্রি হয়ে যায় আগেভাগেই। এ কারণে কেবিন কালোবাজারি ছিল তুঙ্গে। বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মো. মজিবর রহমান বলেন, ঈদের পর ঢাকামুখী চাপ শেষ হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে বরিশাল-ঢাকা রুটে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করবে বলে তিনি জানান। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, গতকাল নিয়মিত ট্রিপের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত লঞ্চ রুটে যুক্ত করা হয় যাত্রীর চাপ সামলাতে। ঈদ-পরবর্তী ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ আগামী দিনগুলোতে কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে বরিশাল থেকে সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকামুখী স্রোত অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকামুখী কোনো টিকিট নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ফয়সাল কবির জানান, ২০ জুলাই পর্যন্ত ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর নিয়মিত বাসে কোনো সিট নেই। অতিরিক্ত যাত্রীরা বিকল্প বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকার গন্তব্যে যাচ্ছেন।

খুলনা : পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনা থেকে সড়কপথে বেশির ভাগ মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন। চাপ সামলাতে বিভিন্ন স্বল্প দূরত্বের চলাচলকারী বাসও ঢাকা রুটে চালানো হয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি অর্থ আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও ফিরতি পথে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এদিকে সড়কপথে কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছানোর কারণে এবার ট্রেনের টিকিটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল কম। ঈদের ছুটি শেষে শুক্র ও শনিবার ট্রেনের টিকিটের জন্য রেলস্টেশনে কিছুটা ভিড় থাকলেও গতকাল তা দেখা যায়নি।

রাজশাহী : ঢাকামুখী ট্রেন ও বাসের টিকিটের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আছে বেশি দামে বাইরে থেকে টিকিট কেনার অভিযোগও। রাজশাহী রেলস্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ টিকিট সংগ্রহ করছেন। সোনার হরিণ ট্রেনের টিকিটের যে চাপ, তাতে বেশির ভাগ মানুষ তার নাগাল পাচ্ছে না। বাস কাউন্টারগুলোতেও একই অবস্থা।

রবিবার দুপুরে গিয়েও রেলস্টেশনের কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। আনোয়ার হোসেন নামের একজন বলেন, ‘জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে। টিকিটের জন্য ভোর থেকে অপেক্ষা করছি। দুপুরে একটি টিকিট পাওয়া গেছে। কিন্তু আমার প্রয়োজন দুটি। এখন আরেকটি টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি।’

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অর্ধেক টিকিট অনলাইনে ও অর্ধেক টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইনে সার্ভার জটিলতার কারণে যাত্রীরা ভরসা রাখছেন কাউন্টারেই। এ জন্য তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ কেউ আগের রাতে এসেই লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।

রাজশাহী রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, ৭ জুলাই থেকে টিকিটের জন্য চাপ তৈরি হয়েছে। সেদিন থেকে ঈদের পরের ঢাকামুখী ফিরতি ট্রেনের টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে। এরপর থেকে ধারাবাাহিকভাবে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী আসন না থাকায় তারা টিকিট দিতে পারছেন না।

রংপুর : ঈদের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন সড়কপথে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল দুপুরে নগরীর কামারপাড়া স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি বাসই নির্ধারিত সময়ের দেড় থেকে ৫ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে।

ফেনী : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ২৭ কিলোমিটার অংশে ঈদে গন্তব্যে ফেরাদের পড়তে হচ্ছে না কোনো যানজটে। মহাসড়কের ফেনীর কোথাও যানজট না থাকলেও গন্তব্যে ফেরা যাত্রীদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে টিকিটের জন্য। বিভিন্ন বাস কাউন্টারে গন্তব্যে ফেরা যাত্রীদের টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরতে দেখা গেছে। তবে বেশির ভাগ যাত্রী অগ্রিম টিকিট কেটে রাখায় গন্তব্যে যেতে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। অগ্রিম টিকিট কাটতেই যত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই মহাসড়কের ওপর বিভিন্ন জেলার অংশে হাট-বাজার থাকলেও ফেনীর অংশে নেই কোনো হাট-বাজার।

গাজীপুর : ঈদ শেষে উত্তরবঙ্গ থেকে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে গতকালও লোকজন কর্মস্থলে ফিরেছেন। যানজট ও ভোগান্তির শঙ্কায় আগেভাগেই মানুষজন ফিরে এসেছেন। এবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় যে ধরনের ভোগান্তি ছিল সে ধরনের ভোগান্তি ফেরার পথে নেই বলে তারা জানান। অনেকটাই স্বস্তিতে ও নির্বিঘ্নে ফিরেছেন কর্মস্থলে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক গুণ বেড়েছে। গত দুই দিনে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত ব্যাপক আকার ধারণ করলেও গতকাল সকাল থেকে এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত, ভাঙ্গা বগাইল টোল প্লাজা, ভাঙ্গা-বরিশাল, ভাঙ্গা-খুলনা, ভাঙ্গা-ফরিদপুর মহাসড়কে দুপুর পর্যন্ত গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট ছিল না। দুপুর ১টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তে ভাঙ্গা কুমার নদের সেতু ও বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের ওপর এলোমেলো গাড়ি পার্কিং ও ঢাকাগামী বাসগুলো রাস্তার ওপর দাঁড়ানো ও ঘোরানোর কারণে দূরপাল্লার গাড়িগুলোর সমস্যায় পড়তে হয়। মানুষের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর