শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজধানীতে প্রেমের ফাঁদ পেতে অর্থ হাতানোর চক্র

গ্রেফতার দুই নারীসহ পাঁচজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাইফুল ইসলাম পরিবার নিয়ে ঢাকার সবুজবাগে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পেরে দেশে এসে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতানোর জন্য প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। পরিশ্রম ছাড়াই বাড়তি আয়ের নেশায় তিনি বানানো স্ত্রী বিথী আক্তারকে দিয়ে প্রেমের অভিনয় করাতেন। এভাবে ১০ বছর ধরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেককে সর্বস্বান্ত করেছেন তিনি। বিথী ব্যক্তিগত ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীদের টার্গেট করে এ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে সুযোগ বুঝে বাসায় ডেকে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত নকল এ দম্পতি।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় এ চক্রের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী আলমগীর আহম্মেদ প্রতারণার একটি মামলা করেন। পরে ওই মামলার তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় এরপর দুই নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন চক্রের প্রধান সাইফুল ইসলাম, বানানো স্ত্রী বিথী আক্তার, তাদের সহযোগী সজল তালুকদার, শফিকুল ইসলাম শান্ত ও ইভা। তাদের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা, ১২টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম, রশি ও লাঠি জব্দ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সবুজবাগ থানার নন্দীপাড়া দক্ষিণগাঁও থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ফাঁদ পেতে নকল এ দম্পতির টাকা আয়ের অভিনব কৌশল। চক্রটির প্রধান টার্গেট ছিল পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি। বিথী প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে আনতেন সম্পর্কে জড়ানো মানুষটিকে। তারপরই বাসায় দলবল নিয়ে হানা দেন সাইফুল। দলে সাইফুলের পরিচয় সাংবাদিক আর অন্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। পরে চক্রের নারী সদস্যদের সঙ্গে বাসায় আটকে টার্গেট ব্যক্তির আপত্তিকর অবস্থায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। এতে মানসম্মান বাঁচাতে ভুক্তভোগীরা একটা লোভনীয় প্রস্তাব দেন। চক্রটির হাতে প্রতারণার শিকার অনেকেই মানসম্মানের ভয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিস্তার পেয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে চক্রটি এ কাজ করে আসছে। চক্রের নারী সদস্যদের মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের ফাঁদে ফেলে ভাড়া বাসায় আটক রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেছে। পরে তাদের চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে চক্রের নারী সদস্যদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের আপত্তিকর ছবি তুলে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন। আলমগীর আহম্মেদ নামে এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে চক্রটি ১ লাখ ১১ হাজার টাকা এভাবেই আত্মসাৎ করে। পরে তার অভিযোগে চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তা মশিউর আরও বলেন, আসামি সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রয়েছে। কিন্তু প্রতারণা করার জন্য বিথী আক্তার নামে এক নারীকে স্ত্রী বানিয়েছেন। ১০ বছর ধরে তারা একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলে প্রতারণা করে আসছিলেন। এ চক্রটি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গতকাল তাদের আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর