বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

রিকশা হারিয়ে নিজেই হলেন চোরের সর্দার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চুরি হওয়া রিকশা খুঁজতে গিয়ে নিজেই হয়ে ওঠেন চোর। গড়ে তোলেন আলাদা সংঘবদ্ধ দল। পরে চুরিকেই পেশা হিসেবে নেন কামাল হোসেন কমল। সহযোগীসহ কমলকে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছিলেন। তবে বের হয়ে প্রতিবারই কৌশল পরিবর্তন করেছেন। অবশেষে আবারও গতকাল ভোরে কমলসহ চক্রের চার সদস্য ধরা পড়েছেন র‌্যাবের হাতে। অন্য তিনজন হলেন- সাজু, ফজলু  ও শাহিন সরদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৩টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ১৮টি রিকশার চার্জার ব্যাটারি, চারটি মোবাইল ফোন, চারটি মাস্টার চাবি ও নগদ ১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই চক্রটি রিকশাচালক ও যাত্রীদের চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে ছিনতাই করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন রঙের ব্যাটারিচালিত চোরাই এবং ছিনতাইকরা রিকশা মজুদ করে পরে রং পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ভোরে সবুজবাগ ও মুগদা এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানায়, কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি চুরির মামলা এবং ফজলুর নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। শাহিন মান্ডা খালপাড় এলাকায় ৩০ বছর ধরে রিকশার একটি গ্যারেজ পরিচালনা করে আসছেন। সাত বছর আগে এই চোর চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি চোর চক্রকে তার গ্যারেজ ব্যবহার করে চোরাই রিকশা রাখা ও বিক্রিতে সহায়তা করতেন। আর রিকশা বিক্রির টাকা থেকে তিনি ১০ শতাংশ কমিশন পেতেন।

 র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, কমলের বাড়ি পটুয়াখালীতে। ১৫ বছর আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালাতেন। ভাড়ায় চালানো সেই রিকশাটি একদিন চুরি হয়ে যায়। ধারদেনা করে মালিককে সেই রিকশার দাম পরিশোধ করেন কমল। ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সে চুরি যাওয়া রিকশা খুঁজতে থাকে। তার চুরি যাওয়া রিকশা খুঁজতে গিয়ে অপরাধ জগতের সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সে নিজেই রিকশা চুরিকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তিনি বলেন, কমল নতুন রিকশায় উঠে রিকশাচালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে চালককে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত। আবার কখনো রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভিজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করত। তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াত। সাজু ওই রিকশা চালাত। পথে নতুন রিকশা পেলে ওই রিকশার ওপর নজরদারি করত। একপর্যায়ে কমল রিকশায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাকে ডেকে নিত। বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে সহজ-সরল রিকশাচালক তার কথায় রাজি হয়ে যেত। পরে সুবিধামতো একটি বাসার সামনে রিকশা থামিয়ে রিকশার চালককে বলতেন আপনাকে বাসার ভিতরে ঢুকে মালামাল দিয়ে আসতে হবে। চালক বাসার ভিতরে ঢোকা মাত্রই অপর সদস্যরা দ্রুত রিকশাটি নিয়ে সটকে যেত। র‌্যাব জানায়, চুরি যাওয়া রিকশা শাহীন, আকবর, মনির এবং বাবলুর গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত। তারপর রিকশার মালিককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করত। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করত। এরপর একটি অজ্ঞাতস্থানে রিকশা রেখে রিকশার মালিককে রিকশা নিয়ে যেতে বলত। এ চক্রের সদস্যরা একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে একই কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। রিকশা চুরি চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী কমল। চক্রটি রিকশা চুরির জন্য মূলত বাসাবো বাসস্ট্যান্ড ও মান্ডা এলাকাকে বেছে নিত। আর চুরির পর রিকশাটি চালিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতেন তার সহযোগী সাজু। আরেক সহযোগী ফজলুর সহায়তায় রং ও সিট কভার পরিবর্তন করে রিকশাগুলো ৫ হাজার থেকে ১২ টাকা দামে বিক্রি করা হতো।

 

 

সর্বশেষ খবর