শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বন্দ্বের বলি যুবলীগ কর্মী আল আমিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে ৪০ হাজার অবৈধ ঘর রয়েছে। এসব ঘর থেকে ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির জন্য লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়। সেসব টাকা যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে। অর্থাৎ বস্তিতে যার আধিপত্য বেশি, তার পকেটেই যায় সব টাকা। এই আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খান ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।

সর্বশেষ কড়াইল বস্তির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি ইউনিটে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নেয়। যার বলি হতে হয় যুবলীগকর্মী আল আমিনকে (৩০)। গত ১৭ আগস্ট কড়াইল ১ নম্বর ইউনিট নুরানী জামে মসজিদে ঢুকে আল আমিনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব জানায় পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোহাম্মদ আলী, মো. খাজা, মো. আমজাদ হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির রাসেল ও মাসুদ আলম। ২২ ও ২৩ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যানুসারে সংঘর্ষে ব্যবহৃত বড় ছোরা, চাপাতি, ডিস্ক কুড়াল, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে যুবলীগকর্মী আল আমিন হত্যার ঘটনায় তার ভাই মো. জুয়েল সরকার বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেন। এতে ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার রাতেই কড়াইল বস্তিতে অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় তিন আসামি মাহবুব আলম, মাসুদ রানা ও ইলিয়াস আহমেদকে গ্রেফতার করে বনানী থানা পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের দুই দিনের রিমান্ডেও পায় পুলিশ। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানায় পুলিশ। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মাদ হারুন অর রশীদ বলেন, কড়াইল বস্তি ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এর ৯০ শতাংশ পড়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। মফিজুর রহমান এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কড়াইল বস্তির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি ইউনিটে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুটি গ্রুপের বিবাদ চলে আসছিল। ২২ জুলাই সাতটি ইউনিটের কমিটি গঠন হয়। ওই সাত কমিটির বেশির ভাগ পদে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খানের সমর্থকদের প্রাধান্য পাওয়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এ থেকে দ্বন্দ্বেই প্রাণহানি হয় আল আমিনের। ডিবি প্রধান হারুন আরও বলেন, নুর আলম নুরু কড়াইল উত্তর-২/দক্ষিণ ইউনিটের সহসভাপতি হওয়ায় এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে মফিজ গ্রুপের জসীমউদ্দীন রিপনকে সেক্রেটারি পদ না দিয়ে রফিকুল ইসলাম ওরফে রাজুকে সেক্রেটারি করায় কাউন্সিলর মফিজ গ্রুপের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজ গ্রুপের নেতারা চাঁদাবাজির টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় নবগঠিত কমিটির নেতারা মাঠ দখলের লক্ষ্য নিয়ে নিয়মিত মহড়া দিতে থাকে। ১৭ আগস্ট এশার নামাজের আগে কাদের খানের অনুসারী নুরু-আলী-কবির ও তাদের সহযোগীরা মহড়ার এক পর্যায়ে রিপন-জুয়েল গ্রুপের আওলাদকে সামনে পেয়ে মারধর করে। তখন উভয় গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর