মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

৩০০ টাকার জন্য খুন আওয়ামী লীগ নেতা

নেপথ্যে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, ফুটপাতের চাঁদাবাজি ও ডিশ-ইন্টারনেটের ব্যবসা, লাপাত্তা প্রধান আসামি যুবদল নেতা ফাহিম, আদালতে তিনজনের স্বীকারোক্তি, কারাগারে ৪, আরও ১২ জনকে খুঁজছে পুলিশ

সাখাওয়াত কাওসার

৩০০ টাকার জন্য খুন আওয়ামী লীগ নেতা

মাত্র ৩০০ টাকার জন্য খুন হন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার শহীদ ফারুক সড়কের আবু বকর সিদ্দিক হাবু (৩৭) নামের আওয়ামী লীগ নেতা। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ফুটপাতের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ভাড়া আদায়ের সময় অতিরিক্ত ৩০০ টাকা দাবি করেছিলেন হাবু। সূত্রপাত ওই ঘটনা দিয়েই। ঠিক পরদিনই খুন হন তিনি। থানা পুলিশের পাশাপাশি একাধিক সংস্থা চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলে এ বিষয়টি উঠে আসে। এর বাইরেও গ্রেফতার তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার সোর্স শাহীনের ভাই হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে অন্যতম খুনি যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম।

গতকাল এ বিষয়ে কথা হয় তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শহীদ ফারুক সড়কের ফুটপাতের ৪০টি দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতি দোকান থেকে  দৈনিক ৪০ টাকা করে তুলতেন ফাহিমের লোকজন। প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা উঠত। সেই টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে দিতে হতো স্থানীয় প্রভাবশালী শামীমকে। শামীম স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠ। শামীম সেই হাবুর মাধ্যমে ৫০০ টাকার বদলে ৮০০ টাকা দাবি করলে ফাহিম আর হাবুর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর পরই হাবুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, হাবু খুনের নেপথ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ, ফুটপাতের চাঁদাবাজি ও ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের তথ্য খুঁজে পেয়েছেন তারা। শহীদ ফারুক সড়ক এলাকায় অনেকের নামেই বিভিন্ন মিটার আছে। একটি মিটারের সহায়তায় ৩০০ থেকে ৪০০ ঘরে সংযোগ দেওয়া হয়। প্রতি দোকানে সংযোগের জন্য দৈনিক ৪০ টাকা করে তুলে থাকেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেই হিসাবে ফাহিমের ৪০ ঘর থেকে প্রতিদিন যে টাকা উঠত, সেখান থেকে শামীমকে ভাগ দিতে হতো।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- ফালান ওরফে কানা ফালান, সেলিম মোহাম্মদ, সুজন ও আল-আমিন। সুজন ছাড়া বাকি তিনজন খুনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ায় তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খুনের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সূত্র বলছে, ফাহিম যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের নেতা। তার ভাই শাহীন যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের সোর্স। সেই সুবাদে ফাহিম যুবদলের নেতা হয়েও ফুটপাতের দোকান থেকে বিদ্যুতের ভাড়া তুলতেন। হাবু খুনের ঘটনায় ফাহিম প্রধান আসামি হলেও তাকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ তাকে বেশ কয়েক দিন থানার আশপাশেই ঘুরতে দেখার তথ্য পেয়েছেন তারা। ফাহিমকে গ্রেফতার করতে পারলে তার নেপথ্য মদদদাতাদের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তবে ইতোমধ্যে হাবুর এক স্বজনের এ হত্যায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, যিনি হাবুকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুন মাতবর বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের ভাড়ার টাকা নিয়ে ফাহিম ও শামীম গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এরই জের ধরে হাবু খুন হন। হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে ১২ থেকে ১৪ জন উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে গ্রেফতার ফালান, সেলিম ও আল-আমিন হত্যাকাণ্ডের সময় কারা উপস্থিত ছিলেন, কারা আঘাত করেছিলেন সবই জানিয়েছেন আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। এখন ওই ব্যক্তিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আবু বকর সিদ্দিক হাবু ছিলেন যাত্রাবাড়ী ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি। শহীদ ফারুক সড়কে তার কাঁচামালের দোকান আছে। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ১৬ আগস্ট শহীদ ফারুক সড়কে হাবুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ডেমরা জোনাল টিমের কর্মকর্তারাও এ খুনের ছায়াতদন্ত করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর