শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কুড়িগ্রামে ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

তিস্তাপারে বন্যার শঙ্কা

প্রতিদিন ডেস্ক

কুড়িগ্রামে ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

কুড়িগ্রামে ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে তিস্তা-দুধকুমার-ব্রহ্মপুত্রপাড়ের শত শত পরিবার। গত ৩-৪ দিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর। অন্যদিকে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০   সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার। ফলে তিস্তাপারের মানুষ ৭ম দফায় বন্যার আশঙ্কা করছেন।

কুড়িগ্রাম : উলিপুরে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা ও গোয়ালপুড়ি গ্রামে গত এক মাসে ২০টি বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে। তাছাড়াও ঘোগাদহ ইউনিয়নের একটি চর ও রসুলপুর গ্রামেও গত একমাসে ৩০টি পরিবার ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালমনিরহাট : ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০  সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিস্তাপারের মানুষ ৭ম দফায় বন্যার আশঙ্কা করছেন। এর আগে চলতি বছর তিস্তা অববাহিকার মানুষ ৬ষ্ঠ দফায় বন্যার কবলে পড়ে বলে জানান পাউবো কর্তৃপক্ষ । উজান থেকে পানি ধেয়ে আসায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকাল ৩টায় দেশের বৃহত্তম ‘সেচ প্রকল্প’ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ৫২.৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ১০  সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত রেকর্ড করা হয়। এর আগে সকাল  ৯টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি (৫২.২৭) বিপৎসীমা ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রাবহিত হয়। এরপর  সকাল থেকে পানি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এদিকে তিস্তা পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা ও ভাঙনের আশঙ্কা করছেন জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী ও সদর উপজেলার কালমাটি, চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। অব্যাহত বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চলেও কয়েকশত পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দোয়ানি ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতের মধ্যে (গত রাত) তিস্তার পানি কমতে পারে।

রংপুর : মাত্র ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার। গতকাল বিকাল ৩টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী মানুষ  আবারও বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটারে। ৯ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার। সেপ্টেম্বরের শুরুতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমনচাষিরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কদিন আগে বন্যায় নদী তীরবর্তী অনেকের আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অনেকে ধারদেনা করে আমনের আবাদ করলেও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আতঙ্কিত। এছাড়া পানি বাড়ায় চরের অনেক পরিবার পানিবন্দি পয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার পানি  আবারও বাড়ায় মানুষের দুর্ভোগ  বাড়বে।  তিনি বলেন, কদিন আগের বন্যায় তার ইউনিয়নে হাজারের ওপর পরিবার পানি বন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে  ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

সর্বশেষ খবর