শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ৫০ নারীকে ব্ল্যাকমেল, ১২ বিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ৫০ নারীকে ব্ল্যাকমেল, ১২ বিয়ে

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেজে অন্তত অর্ধশতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেল করেছেন মামুনুল ইসলাম (৩০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি একটি গ্রিলের দোকানের মিস্ত্রি। পড়ালেখা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিগো লাইভের মাধ্যমে পরিচিত হতেন নারীদের সঙ্গে, এরপর বিভিন্ন কৌশলে তার ব্ল্যাকমেলিং ফাঁদে ফেলতেন তাদের। মামুন নিজেকে কখনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপসচিব এবং কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সখ্য গড়ে তুলতেন। এরপর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও করে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করতেন। বুধবার দিনাজপুরের খানসামা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।  সংস্থাটি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নারীদের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন মামুন। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক তরুণীকে ফাঁদে ফেলেছেন। এ ছাড়া ১২ জন নারীকে ভুয়া কাবিননামা দিয়ে বিয়ে করেছেন। তার মোবাইলে অসংখ্য পর্নো ভিডিও এবং ছবি পাওয়া গেছে।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম।

তিনি বলেন, কলেজপড়ুয়া এক ভুক্তভোগী তরুণী মামুনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এরপর মামলাটির তদন্তের ভার পায় সিআইডি। পরবর্তীতে সিআইডি খানসামার আমতলী বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে। মামুনের কাছ থেকে পাঁচটি নকল নিকাহনামা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বদলির ভুয়া অফিস আদেশের কপি ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়। মামুনের আসল নাম মমিনুল ইসলাম। তিনি নিজেকে বিসিএস (৩৬ ব্যাচ) ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিতেন। বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, মামুনের টার্গেট বিভিন্ন বয়সী তরুণী। অল্প শিক্ষিত হয়েও সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় কথা বলে মানুষের মন জয় করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তার শরীরের অবয়বের সঙ্গে মিলে যায় এমন শারীরিক গঠনের মুখে মাস্ক পরিহিত কিংবা মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা যায় না এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের ছবি নিজের ছবি বলে দেখিয়ে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করতেন। সম্পর্কের একপর্যায়ে তিনি ভুক্তভোগী মেয়েদেরকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন এবং দ্রুতই বিয়ে করতে চাইতেন। কেউ বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে মামুন আত্মহত্যা করবে বলেও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে রাজি করাতেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামুন পর্নো ভিডিওগুলো কোনো সাইটে আপ করেছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। আর তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মামুন কখনো ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন না। বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছে অথবা তার ছুটি হচ্ছে না এরকম বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে সরাসরি বিবাহ অনুষ্ঠানে আসতে পারছে না বলে জানিয়ে দিতেন। কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত নিকাহনামা প্রস্তুত করে ভুক্তভোগী মেয়েদের ঠিকানায় কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতেন। মেয়েরাও ওই কাবিননামায় স্বাক্ষর করে মামুনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতেন। ভুয়া বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পরে প্রতারক মামুন মেয়েদের আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলতেন। ভিডিও কলে কথোপকথনের সময় মেয়ের আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ড করে নিজ মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখতেন মামুন।

সর্বশেষ খবর