শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব দুই দলে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব দুই দলে

রাজশাহীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের প্রকাশ্য বিরোধ রয়েছে। জেলার সব উপজেলায়ই দলটির নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। কোন্দল রয়েছে বিএনপিতেও। ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটিতে কমিটি নিয়ে সংঘাত, সংঘর্ষ চলছে। এ ছাড়া কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ বাম দলগুলোর রাজনীতি। ২০০৮ সালের পর রাজশাহীতে বদলে যেতে থাকে আওয়ামী লীগের অবস্থান। টানা তিন মেয়াদে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনেই জয় পায় আওয়ামী লীগ ও জোটসঙ্গীরা। রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সম্প্রতি এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই আসনের দুটি উপজেলায় এমপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। রাজশাহী-২-এর এমপি আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তাঁর সঙ্গে শীতল সম্পর্ক মহানগরী আওয়ামী লীগের।

রাজশাহী-৩-এর এমপি আয়েন উদ্দিন। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখল, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহীদের মদদদান, স্বজন তোষণের  অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় নেতারা। রাজশাহী-৪-এর এমপি এনামুল হক। তাঁর সঙ্গে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বিরোধ প্রকাশ্যে। রাজশাহী-৫-এর এমপি ডা. মনসুর রহমান। সেখানে আওয়ামী লীগ বিভক্ত এমপি মনসুর ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার নামে। এমপির বিরুদ্ধে জামায়াত, বিএনপি ও বিদ্রোহীর পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ আছে। যদিও ডা. মনসুর তা অস্বীকার করেছেন। রাজশাহী-৬-এর এমপি শাহরিয়ার আলম। বাঘায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আক্কাস আলী। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে কিছু বিরোধ থাকে। এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দুর্গ হারিয়েছে বিএনপি। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের কারণে সে দুর্গে ফেরা হয়নি দলটির। কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, বিএনপি ভুলত্রুটি শুধরে তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছে। রাজশাহী জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে আবু সাইদ চাঁদকে। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে যাতে সংগঠিত করতে না পারি, সেজন্যই মিথ্যা অভিযোগে মামলা ও আমার গ্রেফতার দাবি করা হচ্ছে। তার পরও বিএনপি তার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।’ নগর বিএনপিতে গতি ফেরাতে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুন-অর-রশীদকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি নগর বিএনপিতে গতি না বাড়িয়ে সংঘাত বাড়িয়েছে। অফিস দখল-পাল্টা দখল নিয়ে উত্তেজনা, মামলার ঘটনাও ঘটেছে। নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, কমিটির অন্য সবাই সদস্যসচিব মামুনকে বাদ দিতে চান। এ ছাড়া রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চলছে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার বিরোধ। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু দাবি করেন, বিএনপি আগের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী। রাজশাহীতে বাম দলগুলোর রাজনীতি নামমাত্র কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের চলাফেরা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। ওয়ার্কার্স পার্টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে অস্তিত্বের জানান দিয়েছে। সিপিবি, বাসদ ও গণসংহতি আন্দোলন মাঝেমধ্যে মিছিল করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু বলেন, ‘ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া রাজশাহীতে অন্য বাম দলগুলোর তেমন কার্যক্রম নেই।’ জাসদের অবস্থান খুবই দুর্বল। হাতে গোনা কয়েকজন নেতা দলটিতে থাকলেও তাঁরা বিভক্ত। আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী ও মো. সেলিমুজ্জামান নিজেদের দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ জানান, সরকার দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বাম জোটের শরিকরা প্রতিবাদ করেন, মাঠে থাকেন।

সর্বশেষ খবর