রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

‘ধুম’ দেখে চুরির দুর্ধর্ষ স্টাইল রপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতীয় সিনেমা ‘ধুম’ দেখে চুরির বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করেন রাজু হাসান ওরফে মেহেদী হাসান রাজু ওরফে আফসার হোসেন তুহিন। এরপর সহযোগী ফজলুল করিম দিপুকে নিয়ে পর্যটক বেশে পর্যটন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি করতেন তিনি। বাসায় লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবিতে যাতে নিজেকে চেনা না যায়, তাই প্রথমে মাসখানেক চুল-দাড়ি বড় করতেন রাজু। টার্গেট অনুযায়ী চুরির পর সেলুনে গিয়ে ক্লিন শেভ ও চুলের স্টাইল পরিবর্তন করে গা-ঢাকা দিতেন তিনিসহ চক্রের সদস্যরা। অবশেষে দুই চোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে শুক্রাবাদে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। এ সময় রাজু ও দিপু একটি মোটরসাইকেলে আসছিলেন। তাদের থামার সংকেত দিলে না থেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে ১টি সোনার নেকলেস, ৯টি সোনার আংটি, ২টি সোনার ব্রেসলেট, ৩টি সোনার কানের দুল, লকেটসহ ১টি সোনার চেইন, বিভিন্ন দেশের ৩৯টি নোট, ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি নিবন্ধনবিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানান, রাজু ২০১১ সাল থেকে চুরি করে আসছিলেন। তিনি ঢাকাসহ দেশের নানা জেলায় বিভিন্ন সময় সংঘটিত শতাধিক চুরির ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সম্প্রতি কক্সবাজার সদরের একটি বাসায় চুরি হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার মালামাল ওই বাসা থেকে চুরি করে এনেছিলেন এ দুজন। শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, রাজু পর্যটকের বেশে কক্সবাজারে গিয়ে বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা এনজিও কর্মকর্তাদের মালামাল চুরি করতেন। চুরির সময় দিপু বাইরে পাহারা দিতেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে কখনো আরমান, কখনো মুশফিকুর রহমান পরিচয়ে পদস্থ কর্মকর্তা, ঠিকাদার বা ব্যবসায়ী সেজে প্রতারণার অভিযোগে মিরপুর থেকে নাজমুল হোসেন নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি নম্বরবিহীন প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মোহাম্মদপুরের টাউন হলে লাইট হাউসের একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে যান নাজমুল। তিনি নিজেকে ঠিকাদার পরিচয় দেন। দু-এক দিনের মধ্যে ১১ লাখ টাকার পণ্য নেওয়ার কথা বলেন তিনি। দুই দিন পর ওই দোকানের মালিককে ফোন দিয়ে বেশ কিছু পণ্য ভাসানটেকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলেন। কথামতো ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪০ টাকার মালামাল দুজন কর্মচারীসহ পিকআপে করে পাঠিয়ে দেন মালিক। পণ্য পেয়ে গ্রেফতার নাজমুল সব মাল ভাসানটেকের আরেকটি ইলেকট্রিক দোকানে ডিসকাউন্টে বিক্রি করে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দোকানি মামলা করলে প্রতারক নাজমুলকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। নাজমুল কখনো জাতীয় পরিচয়পত্র, কখনোবা জন্মসনদ ব্যবহার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করেছেন। এরপর পরিস্থিতি বুঝে কখনো পদস্থ কর্মকর্তা, কখনো ঠিকাদার বা কখনো ব্যবসায়ী সেজে প্রতারণা করে আসছেন। এ কাজে মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি প্রাইভেটকার ব্যবহার করে থাকেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে ২৩টির বেশি প্রতারণা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

 

সর্বশেষ খবর