শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু

দ্রুত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ। সাতটি পিয়ারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসানো সম্পন্ন হওয়ায় যমুনার উত্তাল বুকে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সেতু। সেতুটি চালু হলে সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগসহ খুলবে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দ্বার। সেতুটিকে ঘিরে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানসহ এ অঞ্চলের ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্র ও ট্রান্সপোর্ট হাব হিসেবে গড়ে ওঠার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের ৯ আগস্টের মধ্যেই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে। এই সেতু দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে  সেতু নির্মাণের চুক্তি হয় ২০২০ সালের ১০ আগস্ট। একই বছরের ২৯ নভেম্বর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ হবে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে আন্তর্জাতিক মানের স্টেশন ভবনসহ ইয়ার্ড রিমডেলিং থাকবে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৮০.৯৫ কোটি টাকা। জাপানি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি প্যাকেজে কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রায় ৪৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ৫০টি পিয়ারের মধ্যে সেতুর পূর্ব পাশে সাতটি পিয়ারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি ৩৭টি পিয়ারের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। সেতুতে কোনো স্লিপার থাকবে না। ডিজাইন স্পিড থাকবে যার মাধ্যমে লিমিট অনুসারে রেলগুলো দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৩৮টি ট্রেন পারাপারের সময় গতি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিষিদ্ধ রয়েছে ব্রডগেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও। নির্মিতব্য রেলসেতু দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ৮৮টি ট্রেন চালানো যাবে। শুরুতে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। সেতুটি চালু হলে ঢাকাসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। জাতীয় অর্থনীতিতে রেলওয়ের অবদান বৃদ্ধি পাবে। ট্রেনের রানিং টাইম কমবে। ফলে পরিচালন ব্যয় কমবে এবং রেলওয়ের আয় বাড়বে। কনটেইনার ট্রেন পরিচালনা শুরু করা যাবে। ট্র্যাক, সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নতি হবে। ফলে অপারেশন দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় সয়দাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নবিদুল ইসলাম জানান, সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যবসায়িক সুবিধা বৃদ্ধির সুফল আশা করছেন। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জবাসী সুফল পেতে শুরু করেছেন। সেতুর কাজে যেসব শ্রমিক বা গার্ড রয়েছে তারা সবাই সিরাজগঞ্জের। চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রিজ পরিচালক জেহাদ আল ইসলাম জানান, সেতুটি উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান জানান, রেলসেতু নির্মাণের ফলে বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর লেনে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটলটি দক্ষিণ লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। এর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে সে দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর