শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গোমতীর নাব্য উন্নয়নে আটকে আছে ভারতের সঙ্গে নৌবাণিজ্য

২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু শিগগিরই

শিমুল মাহমুদ

গোমতীর নাব্য উন্নয়নে আটকে আছে ভারতের সঙ্গে নৌবাণিজ্য

সেভেন সিস্টারস খ্যাত উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি-আমদানির নৌবাণিজ্য গোমতী নদীর নাব্য উন্নয়নের ফাঁদে আটকে আছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এ রুটে পরীক্ষামূলক নৌবাণিজ্য শুরু হলেও এরপর আর কোনো ট্রিপ যায়নি। বলা হচ্ছে, গোমতী নদীতে পর্যাপ্ত নাব্য নেই। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া বন্দর পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথের ৮০ কিলোমিটারেই রয়েছে নাব্য সংকট। ফলে নৌপথে বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য জোরদারের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ প্রায় পুরো নদীটিই খননের উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপিতে অনুমোদিত নতুন এ প্রকল্প একনেকে যাবে অনুমোদনের জন্য। তারপর দ্রুতই শুরু হবে গোমতীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। নদী খননের জন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৭ কোটি টাকা। তবে পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শে ডিপিপি সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প দেরিতে শুরু হওয়ায় ব্যয় ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে গোমতী খনন প্রকল্পে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ২৪ কোটি ৫৩ লাখ রুপি অনুমোদন দিয়েছে। এ অর্থ গোমতী নদীর ড্রেজিংয়ে ব্যয় হবে। একই সঙ্গে ১০টি ভাসমান জেটি স্থাপন করা হবে ওই নদীপথে। ৯৩ কিলোমিটার নৌপথের ৮৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। বাকি পথ ভারতে। তাই এ রুটে দুই দেশের নৌবাণিজ্যে বাংলাদেশি জাহাজই ব্যবহৃত হবে। নৌপথের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে যাবে। এটি পাস হয়ে কাজ শুরু করতে কিছু সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, গোমতীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের ব্যবহার অনেক বাড়বে। বিশেষ করে কুমিল্লা-আখাউড়া অঞ্চলের পণ্য পরিবহন বেড়ে যাবে নৌপথে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত নৌবাণিজ্য অনেক সহজ হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভারতেরও আগ্রহ থাকায় গোমতী নদী দিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ভারতের ত্রিপুরার সোনামুড়া বন্দরে দুই দেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানি-আমদানির রুটটি অনেক সম্ভাবনাময়। দাউদকান্দি থেকে গোমতী নদী দিয়ে কুমিল্লার তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং ও কুমিল্লা সদরের বিবিরবাজার হয়ে সোনামুড়া পর্যন্ত হবে এই বাণিজ্যিক নৌচলাচল। নাব্য সংকট ছাড়াও এ নদীর ওপর ছোট-বড় ২৩টি কম উচ্চতার সেতু থাকায় পণ্যবাহী বড় জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। ফলে ছোট জাহাজেই পণ্য রপ্তানি-আমদানির কাজ করতে হবে। বর্তমানে নাব্য সংকটের কারণে গোমতী নদী খনন ছাড়া এ বাণিজ্য সাফল্যের মুখ দেখছে না। সরকারি অর্থায়নে নৌপথ পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি জানুয়ারি, ২০২২ থেকে জুন, ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু অনুমোদন বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটি শিগগিরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক সভায় উপস্থাপন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশি সিমেন্টের চাহিদা ব্যাপক। বাংলাদেশের অধিকাংশ সিমেন্ট কারখানা মেঘনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। দাউদকান্দিতে মেঘনা সেতু ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ বা পাশের মোক্তারপুর থেকে ট্রাকে করে ২০ টনের সিমেন্ট নিয়ে নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লাহয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে বিবিরবাজার স্থলবন্দরে পৌঁছাতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। গোমতী দিয়ে নৌপথটি চালু হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে সোনামুড়ার পণ্য পরিবহন ব্যয় কমে যাবে।

সর্বশেষ খবর