সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রতারণায় নিঃস্ব হাজার হাজার রোহিঙ্গা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কথিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাজার হাজার যুবক। ‘নিউফোর্স’ নামে এমএলএম কোম্পানিটি কক্সবাজারের ৩২ ক্যাম্প থেকে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমএলএম কোম্পানির প্রতারণার কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এখনো আমরা পাইনি। তবে বিষয়টা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ একইভাবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক সৈয়দ হারুন উর রশিদ। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় ‘নিউফোর্স’ নামে কথিত এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম। শুরুতে

 কুতুপালং, বালুখালী ও ট্যাংখালী ক্যাম্পে এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম শুরু হলেও অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশির ভাগ এলাকায়। কথিত এ এমএলএম কোম্পানির নেপথ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত কয়েকজন সরকারি ও এনজিও কর্মকর্তা। ‘নিউফোর্স’ এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম সম্পূর্ণ হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক। তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানে সম্পূর্ণভাবে হোয়াটসঅ্যাপই ব্যবহার করে। এ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে নিবন্ধন ফি নেওয়া হয় ১২ হাজার টাকা। সদস্য হয়ে বিনিয়োগ করলে দেড় মাসের মধ্যে দ্বিগুণ লাভ এমন প্রলোভন দেওয়া হয়। লাভের অঙ্ক পাওয়ার আশায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা সর্বনিম্ন ৮৮ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন। দ্রুত লাভের আশার অনেকে আবার তিন থেকে চারটি আইডি নিয়ে সদস্য হন। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ক্যাম্পের হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ‘নিউফোর্স’। প্রতারণার শিকার কুতুবপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হামিদ মুন্সি মাস্টার বলেন, ‘বেকারত্ব দূর এবং দ্রুত আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিউফোর্সের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সদস্য হতে ১২ হাজার টাকা এবং বিনিয়োগের জন্য ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার সময় বলা হয় বিনিয়োগের টাকা দেড় মাসের মধ্যেই দ্বিগুণ হবে। সদস্য হওয়ার পরদিন থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা লাভ দেওয়া হয়, যা চলে দুই মাস। এতে করে কোম্পানির প্রতি বিশ্বাস জন্ম হয়। তাই নিজে ছাড়াও আশপাশের অনেককেই সদস্য করাই। এখন ওই কোম্পানি লাপাত্তা হয়ে গেছে।’ একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় কোম্পানির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অক্টোবরে শুরু হওয়ার পর মাত্র ১৪ দিনে এ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দুই লাখ মানুষ। এ সময় কোম্পানিতে যুক্ত হয়েছেন ২৪ জন সিনিয়র কর্মকর্তা। তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশি। এ কোম্পানি বেকারত্ব দূর করতে চালু করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর