সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অরক্ষিত ভোরে বলি পথচারী খলু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্দেহভাজনের ফোনালাপের সূত্র ধরে খুলেছে যাত্রাবাড়ীতে পথচারী খলু মিয়া হত্যাকান্ডের রহস্য। খুনির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের সেলফোন। ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, খোদ পুলিশই বলছে, ভোরে অরক্ষিত ঢাকার বলি হয়েছেন খলু মিয়া।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায় নিহত খলু মিয়া গোলাপবাগ থেকে হেঁটে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের কাছে পাওয়া জিনিসপত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় জানা যায়, খলু মিয়া নারায়ণগঞ্জের রূপসী এলাকায় পোশাককর্মীর কাজ করতেন। তিনি সেদিন গাইবান্ধা থেকে বাসে এসে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পৌঁছান। সেখান থেকে হেঁটে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ক্লুলেস এ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারী গ্রেফতার করেও কূলকিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসা থেকে আরিফকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের পর আরিফ তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে জানান, অন্য কোনো ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আরিফের এই বক্তব্যটি সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে আরিফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে খলু মিয়া হত্যার রহস্য। একপর্যায়ে খলু মিয়াকে খুনের দায় স্বীকার করেন আরিফ। পরে তার কাছ থেকে খলু মিয়ার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, রংপুরের পীরগাছার খলু মিয়া নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। গত ২২ জানুয়ারি ভোরে রাজধানীর ধলপুরে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারান তিনি। গাইবান্ধা থেকে বাসে করে এসে যাত্রাবাড়ীতে নামার পর হেঁটে ধলপুর হয়ে বাসায় যাওয়ার সময়ই এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন খলু মিয়া। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, ভোরে যারা বাসযোগে ঢাকায় আসেন, সেই সময়টা ঢাকা অনেকটাই অরক্ষিত থাকে। ফলে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে বাসায় যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা থাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীর হাতে অনেকের প্রাণহানি ঘটে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে নগরবাসীকে ভোরে বাস থেকে নেমেই বাসায় না গিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করে সকালে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

সর্বশেষ খবর