শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এবার যুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির

আসন পর্যাপ্ত থাকলেও তীব্র প্রতিযোগিতা হবে মেডিকেল কলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

আকতারুজ্জামান

এবার যুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির

এইচএসসির ফল প্রকাশের পর এখন যুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকে কেন্দ্র করে এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণদের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, দেশের উচ্চশিক্ষা স্তরে স্নাতক সম্মান, স্নাতক পাসকোর্স, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং মিলে সারা দেশে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ। তবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬২ হাজার আর মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৮ হাজার- সবমিলে ৮০ হাজার আসন রয়েছে। এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করেছে মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সে হিসেবে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে ভর্তির পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। তবে এইচএসসিতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকবে মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরেই। সে হিসেবে ৮০ হাজার আসনকে ঘিরেই ভর্তিচ্ছুদের তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। আর আসন সংকটের কারণে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সব শিক্ষার্থীও তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যমতে, দেশের ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৬২ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৬। স্নাতক সম্মান পর্যায়ে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫২৭। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৯। এ ছাড়া সারা দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০। বেসরকারি ৭২টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৪৮৯।

বিপুল সংখ্যক ভর্তিচ্ছুর সময় কাটছে এখন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই। খুব শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের তথ্যমতে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আবেদন করতে পারবে মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমই শেষ করতে পারেনি অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গত শিক্ষাবর্ষে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জিএসটি) ধারার ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি তুলনামূলক কমলেও ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে সম্মান প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু করতেও বিলম্ব হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের শেসনজটের দিকে ধাবিত করছে। চলতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কীভাবে গুচ্ছ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রক্রিয়ায় আসবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। এ ছাড়া কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী আটটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গত শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় আনা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু হয়নি। চলতি শিক্ষাবর্ষে কতগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে আসবে তা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে উপাচার্যদের বৈঠকে শিগগিরই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আসনের কোনো সংকট হবে না। সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতেও ভর্তিযোগ্য অনেক আসন রয়েছে। তবে সবাই তো পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। তিনি বলেন, আমি চাই একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হোক। এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নিতেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬২ হাজার আর মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় মিলে ১৮ হাজার- সবমিলে ৮০ হাজার আসনে প্রতিযোগিতা হয় ভর্তিচ্ছুদের। এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তি হতে পারবে, কিন্তু সবাই হয়তো পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে না। সারা পৃথিবীতেই শিক্ষার্থীদের এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

 

সর্বশেষ খবর