রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাড়ছে পুষ্টি টার্গেট পূরণের চ্যালেঞ্জ

স্পষ্ট হচ্ছে করোনা মহামারির ক্ষত

জয়শ্রী ভাদুড়ী

তিন বছর ধরে করোনা মহামারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বিশ্ব। জীবন-মৃত্যুর এই লড়াইয়ে চার দফা ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে পড়েছিল দেশের স্বাস্থ্য খাত। অন্যান্য খাতের মতো করোনার প্রভাব পড়েছে পুষ্টি সূচকেও। মাতৃ, শিশু, কিশোরী, প্রবীণ স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়ন করে এসডিজি অর্জনের চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে করোনা।

কভিড-১৯ মহামারির কারণে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির আরও অবনতি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবার প্রাপ্যতা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। গত বছর মে-জুনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বস্তি এলাকায় সমীক্ষা চালিয়েছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড। সমীক্ষায় সহযোগিতা করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। বৈশ্বিক তীব্র অপুষ্টি (জিএএম) সূচক অনুযায়ী জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার বস্তিতে অপুষ্টির হার ১৫ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) তা ১২ শতাংশ। ডিএসসিসির বস্তি এলাকায় ক্রনিক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের হার ৩০ শতাংশ এবং ডিএনসিসি বস্তি এলাকায় ২০ শতাংশ। মেয়েদের তুলনায় এসব এলাকার ছেলেরা বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীষ কুমার আগরওয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে পুষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। কিন্তু ২০২০-এর কভিড-১৯ মহামারির সময় থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ক্রমবর্ধমান দাম সবচেয়ে দরিদ্রদের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। যা দেশ ও বিশ্বজুড়ে মৌলিক খাদ্যসামগ্রীতে প্রভাব ফেলেছে। এটা অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির আরও অবনতি কমিয়ে আনতে ও গত কয়েক দশক অর্জনগুলোকে রক্ষা করতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি করা যেতে পারে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে; সামাজিক সুরক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং উপযুক্ত চাকরির অধিকার ও সুযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে।’

তীব্রতম অপুষ্টিতে (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন বা এসএএম) ভুগছে দেশের অনেক শিশু। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের পর থেকে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির এ তীব্রতম মাত্রার প্রকোপ বেড়েছে অনেক বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাও। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে আসা তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৭২ শতাংশেরও বেশি।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে অপুষ্টি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যদিও এখনো তীব্রতম অপুষ্টি বা এসএএমে ভুগছে দেশের অনেক শিশু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কভিডের প্রাদুর্ভাবে সাধারণ মানুষের অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। আয় কমেছে অনেকের। প্রয়োজনীয় পুষ্টির বিষয়টিতে আপস করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) উপপরিচালক ডা. নুসরাত জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসডিজির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সরাসরি পুষ্টি জড়িত। এই দুই সূচক উন্নয়ন করতে না পারলে আমরা এসডিজি অর্জন করতে পারব না। এ হিসাবে পুষ্টির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনা মহামারির প্রভাব অন্যসব কিছুর মতো পুষ্টি খাতেও পড়েছে। তবে যেভাবে পূর্বানুমান করা হয়েছিল অতটা পিছিয়ে যায়নি। এর উল্লেখযোগ্য কারণ খাবারের অভাব যেন না হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। মানুষ পরিমিত খাবার খেলে পুষ্টি ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা যায়। এ খাতে জনবল বাড়ানো, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে।’ সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, শিশু পুষ্টিতে বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম এই সূচকে বর্তমানে ৩১ শতাংশে আছে দেশ। ২০১১ সালে ৪১ শতাংশ ছিল। এসডিজি অর্জন করতে হলে এই হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম এমন শিশুদের ক্ষেত্রে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। ২০১৭ সালে এটা নেমে এসেছে ৮ শতাংশে। ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জনের টার্গেট ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। শিশুর বয়স অনুযায়ী ওজন কম এমন ক্ষেত্রে সূচক ২২ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সূচক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর