বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আধ্যাত্মিক নেতা গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শামীম মাহফুজ জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র মূল নেতা। মঙ্গলবার রাতে সংগঠনটির নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। সিটিটিসি বলছে, গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ ‘আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আধ্যাত্মিক নেতার ভূমিকা পালন করছিলেন। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে তিনি ব্যাপক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। প্রথম দিকে হিজরতকারীদের তিনিই আশ্রয়-বয়ান দিয়ে বিভ্রান্ত করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকা হয়ে পাহাড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ডা. শাকেরসহ অন্য কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর গা ঢাকা দিতে রাজধানীতে অবস্থান নেন মহিবুল্লাহ।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, গত বছর জানুয়ারিতে সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার সংগঠনটির শূরা সদস্য ডা. শাকের ওরফে শিশির, পলাতক জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজসহ গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যান। এ সময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুকি-চীনদের বিদ্রোহী সংগঠন কেএনএফের (কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলত। সেখানে তাদের সঙ্গে কেএনএফের প্রধান নাথান বম ও অন্য কুকি-চীন নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয়। এ সময় শূরা কমিটিও গঠন করেন তারা। গ্রেফতার মহিবুল্লাহকে সংগঠনটির নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহিবুল্লাহ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় সন্ধ্যার পর প্রশিক্ষণরত সদস্যদের বয়ান দিতেন। তার বয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদের জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। মহিবুল্লাহ পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থান করার পর ঢাকায় চলে আসেন এবং শূরা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে সমন্বয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। শূরা সদস্য ডা. শাকেরকে দাওয়াতি কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য শায়েখ মহিববুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংগঠনের শূরা পর্যায়ের একাধিক সদস্যের সঙ্গে ঢাকা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে সংগঠনের কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি একাধিক বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসায় বিভিন্ন সময় আসা-যাওয়া করতেন এবং সেখান থেকে পেন ড্রাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন জিহাদি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তার ল্যাপটপে সংরক্ষণ করতেন। জিহাদ বিষয়ে নিজস্ব লেখার খসড়া কপিও তার কাছে পাওয়া গেছে। ডা. শাকের সিটিটিসির হাতে গ্রেফতারের পর শায়েখ মহিবুল্লাহ নিজেকে আড়াল করতে তার ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ফোন নষ্ট করে ফেলেন। এক প্রশ্নে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি শামীম মাহফুজ। তার নির্দেশে একটি কমিটি হয়। কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রক্সি। রক্সি গ্রেফতারের পর আরেকজন আমির নিযুক্ত হোন। শূরা কমিটির ছয়জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে আনিসুল ইসলাম তমালকে নতুন আমির ও শায়েখ মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়। মূল ব্যক্তি শামীম মাহফুজকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শামীম, তমাল ও রাকিব পলাতক। তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। রক্সিকে গ্রেফতারের সময় করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার রণবীর। তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মাধ্যমে পলাতক শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। আর শামীম মাহফুজ ডিবি পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। শামীম মাহফুজ কুকি-চীন প্রধান নাথাম বমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাহাড়ি অঞ্চলে যাতায়াত ছিল শামীমের। নাথাম বমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন শামীম। তিনি সপরিবারে নিখোঁজ। তার স্ত্রী এই সংগঠনে জড়িয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শায়েখ মহিবুল্লাহ রিমান্ডে : সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর ডেমরা থানায় করা মামলায় শায়েখ মো. মহিবুল্লাহর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর