সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ভোট গ্রহণের মাত্র এক দিন আগে পদত্যাগ করেছেন। এ ঘটনায় নাটকীয় মোড় নিয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করেছে আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে। বিকালে পাল্টাপাল্টি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার পর রাতে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও নির্বাচনী সরঞ্জাম নষ্ট করার ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ দাখিল হয়েছে থানায়। সব মিলিয়ে আজ ভোট গ্রহণ হবে কি-না, এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ আইনজীবীরা।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ২০২২-২০২৩ মেয়াদে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর সরকারপন্থি আইনজীবীদের ভোট পুনর্গণনার দাবি ও বিএনপিন্থিদের ফল ঘোষণার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উ™ভূত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামান।
তবে এবার ভোট গ্রহণের আগে আহ্বায়কের পদত্যাগে নির্বাচন নিয়ে নানা জটিলতা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা ভোট হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ভোট গ্রহণ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা আজ সকাল ৭টা থেকে মাঠে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন। তাদের দাবি সম্মিলিতভাবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নিযুক্তির আগে ভোট গ্রহণ নয়। পূর্ব ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ এবং আগামীকাল ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে নির্বাচনের। এবারের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই। নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি নিয়ে সরকাপন্থি ও বিএনপিপন্থিরা পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে ২ মার্চ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার-প্রচারণা শেষ হলেও সোমবার রাতে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন মুনসুরুল হক চৌধুরী।এরপর নতুন আহ্বায়ক নিযুক্ত করা নিয়ে সমিতির বর্তমান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিকালে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী নেতা সমিতির বর্তমান সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করার কথা জানানো হয়। অন্যদিকে সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও দুই সম্পাদকসহ বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবী স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাডভোকেট এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক নিযুক্ত করার কথা জানানো হয়। উল্লেখ্য, সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ সাত পদে আওয়ামী লীগ ও দুই সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ সাত পদে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা নেতৃত্বে রয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রে সম্পাদককে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতা বলেই সম্পাদক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নিযুক্ত করেছেন। ফলে ভোট গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই।
জানতে চাইলে সমিতির সম্পাদক নিযুক্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সমিতির সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করে থাকেন। বিকাল ৫টায় দায়িত্ব পাওয়ার পর রাত ৮টার দিকে ব্যালট পেপার স্বাক্ষর শুরু করি। কয়েকটি স্বাক্ষরের পর বিএনপির সভাপতিপ্রার্থী ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে ১০-১২ জন আইনজীবী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অফিস কক্ষে ঢুকে অকথ্য গালাগাল শুরু করেন। একই সঙ্গে তারা কয়েকটি ব্যালট বই ও নির্বাচনী সরঞ্জাম নষ্ট করে ফেলেন। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। এ বিষয়ে আমরা শাহবাগ থানায় এজাহার দাখিল করেছি। এ বিষয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। এবার সমিতির প্রায় ৯ হাজার আইনজীবী ভোট দেবেন। এ নির্বাচন নির্দলীয় হলেও কার্যত দলীয় ছদ্মাবরণেই ভোট হয়। সরকারপন্থিরা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) নামে এবং বিএনপিপন্থিরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারের নির্বাচনে সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সম্পাদক পদে আবদুন নূর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারাই সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচনে লড়ছেন।