সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম

আওয়ামী লীগ-বিএনপি কারও সঙ্গে জোট নয়

রাহাত খান, বরিশাল

আওয়ামী লীগ-বিএনপি কারও সঙ্গে জোট নয়

আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কারও সঙ্গে নির্বাচনী জোট করবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নীতি-আদর্শে ঐকমত্য হলে সমমনা ইসলামী দলের সঙ্গে জোট করার আলোচনা চলছে দলটির। কোনো কারণে জোট না হলে এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। তবে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ না হলে সেই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনী জোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নিত্য দ্রব্য ও জ্বালানির মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রিপোর্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে শুক্রবার বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই দরবার শরিফের মেহমানখানায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে যে নির্বাচন দেখেছি, সেই নিয়মের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করলে দেশে অশান্তির আগুন দিন দিন বাড়বে। অনেক তাজা প্রাণ ঝরে যাবে। মায়ের বুক খালি হবে। কেউ হবে সন্তানহারা, কেউ হবে এতিম। ধ্বংস হবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সব দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সরকার  জরুরি। সেই সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্লাটফরম তৈরি করবে।’ আর একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে শান্তি ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরের।

নির্বাচনী জোটের বিষয়ে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের স্লোগান হচ্ছে- ‘নো আওয়ামী লীগ, নো বিএনপি, নো জাতীয় পার্টি, ইসলাম ইজ দ্য বেস্ট’। এই নীতি-আদর্শ যাদের সঙ্গে মিলবে বা ঐকমত্য হবে, তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা আমাদের আছে। এ লক্ষ্যে ইসলামী সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচনী জোট হতে পারে কি না সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এ রকম কোনো সম্ভাবনা নেই। এ লক্ষ্যে কোনো আলোচনাও হয়নি।’ বিএনপি জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোট করার প্রশ্নই আসে না।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি সমর্থন করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন চায় জাতীয় সরকার। সব দলের সম্পৃক্ততায় সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্লাটফরম তৈরি হলে দেশে শান্তি আসতে পারে।’

নির্বাচনে অংশ না নিলে সুষ্ঠু কিংবা অসুষ্ঠু বুঝবেন কী করে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে তারা যেভাবে নির্বাচন করেছে সেটা কোনোভাবেই স্বচ্ছ ছিল না। তারা তো সেই অবস্থান থেকে সরে আসেনি। নতুন কোনো নিয়ম-নীতি তো তারা আমাদের কাছে উপস্থাপন করেনি।’

আসন্ন সিটি নির্বাচনের বিষয়ে পীর সাহেব বলেন, ‘বিগত জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে সেখানে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এটা ইসলামী আন্দোলন আশা করে না। সিইসিকে ইসলামী আন্দোলন বারবার বলেছে, এই কায়দায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এর কারণ প্রশাসন যেখানে নিরপেক্ষ থাকবে, তারা যেখানে জনগণের পক্ষে থাকবে, সেখানে প্রশাসন যদি একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের সহযোগিতা করে, সেখানে সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরও করার কিছু নেই। প্রশাসনেরও কিছু করার নেই। প্রশাসন হয়ে গেছে দলীয়। নির্বাচন কমিশনও অনেকাংশে দলীয় হয়ে গেছে। প্রশাসন দলীয় হলে যা হওয়ার তা-ই হয়।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের আচরণ, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে জ্বালানি এবং নিত্যপণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে। হঠাৎ নিত্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পৃথিবীর কোথাও দেখি নাই। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের দুর্নীতি এ জন্য দায়ী।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা ও বাস্তবতা মিলতেই পারে। এই সরকার মানুষের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। ২০১৮ সালে তারা রাতে ভোট করেছে।’ সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার মিল আছে বলে মনে করেন তিনি।

সদ্য অনুষ্ঠিত চরমোনাই মাহফিলে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের আহ্বান বিষয়ে পীর সাহেব বলেন, ‘তাদের সঙ্গে জাতীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা যুগপৎ আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলনকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব রেখেছিল। ইসলাম এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণ যেখানে রক্ষা না হবে, সেখানে অন্য ইস্যুতে ইসলামী আন্দোলনকে পাওয়া যাবে না বলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে অনেকে আওয়ামী লীগের বি-টিম বলে কটাক্ষ করেন। বিষয়টি স্পষ্ট করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। দলটি নিজস্ব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট। যে বা যারা এসব কথা বলে তারা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বি-টিম হিসেবে কাজ করতে পারে বলে সন্দেহ তার।

সর্বশেষ খবর