সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তায় হঠাৎ পানি প্রবাহে শঙ্কায় কৃষক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তায় হঠাৎ পানি প্রবাহে শঙ্কায় কৃষক

তিস্তার বুকজুড়ে যখন ধু-ধু বালুচর, মানুষ হেঁটে পার হচ্ছেন, কৃষক ফলিয়েছেন চরে সোনালি ফসল, প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফসল ঘরে তুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক এমন সময় তিস্তা নদীর বুকে হঠাৎ পানি বেড়েছে; বেড়েছে পানির প্রবাহও। এ কারণে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটে তিস্তার চরে চাষাবাদ করা লক্ষাধিক কৃষক। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তিন বছর ধরে ঠিক এমন সময়ই উজানের পানি ধেয়ে এসে বন্যায় ভেসে যায় তাদের কষ্টার্জিত সোনালি ফসল। এ বছরও সেই আশঙ্কাই করছেন চাষিরা। অসময়ের পানি সর্বনাশ ডেকে আনবে এমন দুশ্চিন্তা তাদের চোখেমুখে। শনিবার দুপুরের পর পানি বাড়তে থাকে, যা গতকাল দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে পাউবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিন দিন ধরে তিস্তার পানি কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে পানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৫০.৪০ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে ব্যারাজের ছয়টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিন দিন ধরে পানি বাড়ছে। তিস্তায় পানি এখন থেকে আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এই তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে তিস্তা। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১৩৫ কিলোমিটার।

গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে উজানের প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে এ নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষাকালে বন্যা আর নদীভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভাঙনে ও প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ফসলি জমি, বসতভিটাসহ স্থাপনা। বর্ষা শেষ হলে পানি শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। ঢেউহীন তিস্তার বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর।

নদীপাড়ের মানুষ জানান, বর্ষাকাল শেষ হতেই প্রতি বছরের মতো এ বছরও তিস্তা নদী পানিশূন্য হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা অংসখ্য চরে ভুট্টা, তামাক, গম, পিঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, চিনাবাদামসহ নানা জাতের সবজির চাষাবাদ করেছেন কৃষক। বছরের এই একটিমাত্র মৌসুমে চাষাবাদ করা ফসলে চরবাসীর চলে পুরো বছরের খাবার। গোবর্দ্ধন চরের কৃষক রোকন মিয়া বলেন, ‘গত বছর তিস্তার চরে পিঁয়াজ চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। অসময়ের বন্যায় ডুবে ঋণগ্রস্ত হয়েছি। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর তামাকও চাষ করেছি। পিঁয়াজ খেত না ডুবলেও নিচু জমির তামাক খেত অর্ধেক ডুবে গেছে। তাই পরিবারের সবাই মিলে কেটে নিচ্ছি তামাকপাতা।’ একই এলাকার কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক হাজার মিষ্টিকুমড়ার চারা লাগিয়েছি। কুমড়া ধরেছেও প্রচুর। সেই কুমড়ার খেত অর্ধেক ডুবে গেছে। পানি কমলে কিছু কুমড়া পাব। না কমে গত বছরের মতো বন্যা হলে তো না খেয়ে মরতে হবে।’

 

 

সর্বশেষ খবর