মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজস্ব ফাঁকি ৮৪ হাজার কোটি টাকা

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত নিয়ে সিপিডির তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজস্ব ফাঁকি ৮৪ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার প্রায় ৩০ শতাংশ। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এ খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। ২০১০ সালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বছরে ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ। গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনলাইনে আয়োজিত ‘করপোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা : বাজেটে সরকারি আয়ের অভিঘাত’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরও আয়কর দেন না। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য হওয়ার পরও কর দেন না। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি না হওয়ার বড় কারণ এটি। অন্যদিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি রেজিস্টার্ড হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার ৩০ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২০১০ সালে ২২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। ছায়া অর্থনীতিতে ৮৪ হাজার কোটি টাকা কর ক্ষতি হচ্ছে, যা জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ। এই টাকা যদি পাওয়া যেত তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিন গুণ বৃদ্ধি করা যেত। অর্থাৎ করজাল বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। বড় অংশই করের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কর লোকসান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর অস্বচ্ছতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কর ফাঁকি ও কর এড়ানো। কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোম্পানি তার প্রকৃত আয় কম দেখিয়ে থাকে। অন্যদিকে কর এড়ানোর বিষয়টি হলো- লিগ্যাল ফ্রেমের আওতায় তারা সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দৃষ্টিতে এটাও কর অস্বচ্ছতা। কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর দৃষ্টিতে ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫২তম। কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। কর এড়াতে গিয়েও কর ফাঁকি দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। আর কর ফাঁকি দেওয়া হয় ৮০ শতাংশ। এর মানে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় দেশ। আবার যদি কর ফাঁকি ৫০ শতাংশ ধরা হয়, তাহলে রাজস্ব হারায় ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২২ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী কর ফাঁকির কারণে পৃথিবীতে প্রতিবছর ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার কর লোকসান হচ্ছে। এর মধ্যে করপোরেট পর্যায়ে ৩১২ বিলিয়ন ডলার ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৭১ বিলিয়ন ডলার, যার অভিঘাত স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর বেশি পড়ে। বিশ্ব পর্যায়ে করপোরেট করহার কমলেও বাংলাদেশে এ হার বেড়েছে। এর প্রভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ করপোরেট কর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু আদায়ের দিক থেকে আফিগানিস্তানের নিচে। আবার করহার কমালেও যে কর আদায়ের পরিমাণ সব সময় বেশি হবে সেটাও নয়। বলা হয়ে থাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত যে দেশের বড়, সে দেশে কর আদায়ের পরিমাণ কম হবে।

সর্বশেষ খবর